আধুনিক পদ্ধতিতে কলা চাষ ও কলা গাছের পরিচর্যা পোকা দমন
কিভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে কলা চাষ করবেন তার বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করব। দুই থেকে তিন মাস বয়সী যেগুলো সুস্থ চারা সেগুলো বেছে নিতে হবে। যে জমিতে চারা লাগাবেন সেই জমিতে জৈব সার দিয়ে তিন থেকে চারটি চাষ দিয়ে জমি ফেলে রাখতে হবে। আধুনিক পদ্ধতিতে কলা চাষ করতে হলে আপনি ২ মিটার পর পর গর্ত করে নিতে হবে। প্রত্যেক গর্তে টিএসপি , ইউরিয়া, গবর সার দিয়ে ভরাট করতে হবে।
দুই ধরনের চারা সাধারণত ভালো একটা অসি চারা ও পানি চারা । অসি চারার পাতা সাধারণত চিকন এর গোড়া সাধারণত মোটা তাজা হয়। আর পানি চারা এর পাতা সাধারণত চিকন দুর্বল হয়। কলা চাষের জন্য সাধারণত অসি চারাই সবচেয়ে ভালো। এ চারা লাগালে সাধারণত ভালো ফলন পাওয়া যায়।
ভূমিকা
আধুনিক পদ্ধতিতে কলা চাষ করতে হলে প্রথমে আপনাকে ভালো জাতের চারা সংগ্রহ করতে হবে । এর পর জমিতে গবর সার দিয়ে ভালো করে চাষ দিতে হবে ও মই দিয়ে সমান করতে হবে । তারপর কিছুদিন ফেলে রাখতে হবে । জমিতে ২ মিটার বাই ২ মিটার দুরত্তে গর্ত করে গবর সার , পটাশ সার দিয়ে মাটি সমান করতে হবে । চারা লাগানোর পর জমিতে যদি রস না থাকে তা হলে ছেচ দিতে হবে । জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে ও রোগ বালাই হলে কীটনাশক স্প্রে ;করতে হবে ।
কলা চাষের আধুনিক পদ্ধতি
আমাদের দেশে কলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল যা প্রত্যেক জেলাতেই সারা বছর পাওয়া যায়। আপনি যদি বাণিজ্যিকভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে কলা চাষ করতে চান তাহলে উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হল বারি কলা ১ ও বারি কলা ২ । আরো অনেক জাত আছে যেমন সবজি কলা , চম্পা কলা, বিচি কলা, অমৃত সাগর কলা ইত্যাদি। কলা একটি ক্যালরি সমৃদ্ধ ফল। এতে আছে ভিটামিন এ ভিটামিন বি ও সি , লৌহ ক্যালসিয়াম ইত্যাদি।
যেসব জমিতে রোদ লাগে এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে উঁচু জমি কলা চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। যদি সমতল জমি হয় তাহলে কয়েকটা চার্জ দিয়ে মই দিয়ে মাটিটা সমান করে আগাছা মুক্ত করে নিতে হবে। যেসব জমি বেশি পুরাতন সেসব জমি থেকে চারা সংগ্রহ করা ভালো নয়। এসব জমি চারা সাধারণত পোকামাকড় আক্রান্ত করে। কলা চাষ সাধারণত সারা বছরই করা যায়।
কলা গাছের চারা লাগানোর নিয়ম
আধুনিক পদ্ধতিতে কলার চারা লাগাতে চাইলে আপনি সারা বছরের যে কোন সময়ই চারা লাগাতে পারেন। কলা গাছের চারা লাগানোর নিয়ম সাধারণত চারা থেকে চারার দূরত্ব ২ মিটার এবং শাড়ি থেকে শাড়ির দূরত্ব ২ মিটার হয়ে থাকে। যারা লাগানোর আগে জমিতে গর্ত করে নিতে হবে। গর্ত হবে সাধারণত ৬০ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ৬০ সেন্টিমিটার গভীর। গর্ত করার পর গর্তের ভিতর গবর সার ও টিএসপি সার দিয়ে গর্ত ভরে দিতে হবে।
চারা রোপনের জন্য সবচেয়ে ভালো হলো অসি চারা। অসি চারার পাতা সূচালো সরু অনেকটা তরোয়ালের মতো শক্তিশালী ক্রমশ ঘোড়ার দিক থেকে উপরের দিকে সরু হয়। সাধারণত তিন মাস বয়সী চারা সুস্থ সবল গাছ থেকে সংগ্রহ করে লাগাতে হবে। যেসব জমির কলা গাছ দুর্বল সেসব জমি থেকে চারা সংগ্রহ করা যাবে না। কলা গাছের চারা যদি দুর্বল হয় তাহলে সেসব কাজ থেকে ভালো ফল পাওয়ার আশা করা যাবে না।
কলা গাছের পরিচর্যা
আপনি যখন কলার চারা লাগাবেন তখন জমিতে পর্যাপ্ত যদি রস না থাকে তাহলে আপনাকে সেচ দিতে হবে। খরা মৌসুমী আপনাকে ২৫ থেকে ৩০ দিন পর পর সেচ দেওয়া লাগবে। বর্ষা মৌসুম হলে কলার জমিতে যাতে পানি না জমে সেজন্য আপনাকে নালা তৈরি করতে হবে যাতে সেই নালা দিয়ে পানি বের হয়ে যেতে পারে। একটা ছাড়া আর পাশে যদি আর একটা চারা বের হয় তাহলে একটি চারা সুস্থ সকল চারা রেখে অন্যগুলো কেটে দেওয়াই ভালো।
জমিতে যখন সার দিবেন ছিটিয়ে দিতে পারেন আবার চারার গোড়া গর্ত করেও দিতে পারেন। কিছু গবর সার জমি যখন তৈরি করবেন সে সময় দিতে হয় এবং কিছু গোবর সার গর্ত করে দিতে হয়। গবর সার বাদেও অন্যান্য কিছু সার আছে যেমন গাছপতি টিএসপি আড়াইশো থেকে ৪০০ গ্রাম , এমওপি আড়াইশো থেকে সাড়ে ৩০০ গ্রাম, ইউরিয়া সার ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
কলা গাছের পোকা মাকর দমন
বিটল পোকা সাধারণত দিনের বেলায় পাতার গোড়ায় লুকিয়ে থাকে এবং এরা রাত্রি বেলা বের হয়।। রাতে বের হয়ে এরা কলা গাছের কচি পাতার যে সবুজ অংশ থাকে সেগুলো চুষে খায়। এই চুষে খাওয়ার ফলে পাতায় অনেক দাগের সৃষ্টি করে। আবার যখন কলা বের হবে তখন মুচার মধ্যে এরা ঢুকে পড়ে এবং এই কচি কচি কলা চুষে খায় ফলে কলার গায়ে অনেক বসন্তের মত দাগ দেখা দেয়।
এসব পোকা দমন করতে হলে যেসব জমিতে বারবার আক্রমণ করে সেসব জমিতে বারবার কলা চাষ না করাই ভালো। কলার মোচা যখন বের হবে তখন পলিথিন ব্যাগ দিয়ে ঢেকে দিলে এই পোকার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এসব পোকা দমন করার জন্য আপনি কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন। ইন্ডোফিল পাউডার প্রতি লিটার পানিতে ৪ গ্রাম এবং টাফগর তরল বিষ ২ মিলি হারে স্প্রে করলে এই পোকার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
কলা গাছের আর একটা রোগ হয় এই রোগের নাম পানামা রোগ এটি একটি ছত্রাক জাতীয় রোগ। এই রোগ আক্রমণ ফলে পাতার কিনারা হলুদ হয়ে যায় এবং কচি পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে। এবং আস্তে আস্তে এই পাতা মরে যায় এবং ঝুলতে থাকে অবশেষে অনেক গাছও মারা যেতে পারে। এটা দমন করতে হলে প্রথমে আপনাকে যে গাছ আক্রান্ত হবে সেগুলো উঠিয়ে পুরে ফেলতে হবে আক্রান্ত গাছের চারা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
কলা গাছের আর একটা মারাত্মক রোগ হলো সিগাটোকা রোগ। এই রোগ গাছের পাতাকে অনেক বড় রকমের দাগের সৃষ্টি করে এবং পাতা দেখতে পুড়ে যাওয়ার মত হয়। এই রোগ দমন করতে হলে আপনাকে কিছু কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। বাভিস্তিন পাউডার প্রতি লিটার পানিতে এক গ্রাম করে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর গাছে স্প্রে করতে হবে এতে আপনি ভালো ফল পাবেন। এভাবে কীটনাশক স্প্রে করলে পোকামাকড় দমন করতে পারবেন।
লেখকের মন্তব্য
কিভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে কলা চাষ করতে হয় , গাছের পরিচর্যা করতে হয় কি ভাবে , রোগ বালাই দমন কিভাবে করা যায় , কিভাবে সার দিতে হয় তার বিস্তারিত আলোচনা করেছি । আপনার যদি এই লেখাটি ভালো লাগলে একটা লাইক দিবেন এবং বন্দুদের মাঝে শেয়ার করবেন ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url