Post Page After Menubar Ad

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন



বাংলাদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শন রয়েছে। এই স্থান ও নিদর্শনগুলো থেকে আমরা অতীতের সংস্কৃতি ও সভ্যতা সম্পর্কে জানতে পারি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে সাংস্কৃতিক প্রাচুর্যসমৃদ্ধর ইতিহাসের মেলবন্ধনে কিংবদন দিতে রূপ নেয় ঐতিহাসিক নিদর্শন স্থানগুলো। বাংলাদেশে অনেক ঐতিহাসিক স্থান আছে তার বিস্তারিত কিছু আলোচনা তুলে ধরা হলো।


প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভরপুরের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। এদেশে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান ও নিদর্শন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এসব ঐতিহাসিক স্থান দেখতে ছুটে আসে অনেক পর্যটক।

ভূমিকা

বাংলাদেশের অনেক ঐতিহাসিক স্থান নিদর্শন গুলোর মধ্যে রয়েছে বগুড়ার মহাস্থানগড়। এটা বাংলার ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। মহাস্তান গড়ের প্রাচীন নাম ছিল পুণ্ড্র নগর । আরো একটা নিদর্শন আছে পাহাড়পুরের বৈদ্য বিহার যেটা নওগাঁ জেলায় অবস্থিত। এখানে বৈদ্য ভিক্ষুকদের জন্য ১৭৭ টি কক্ষ আছে। আরো আছে ঢাকার লালবাগ কেল্লা যা ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিম বুড়িঙ্গা নদীর তীরে ১৬৬৮ সালে নির্মাণ করা হয়। আরো ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যে আছে আহসান মঞ্জিল যা ঢাকা জেলায় অবস্থিত। এছাড়াও আছে কুমিল্লার ময়নামতি ঐতিহাসিক স্থান।

মহাস্থানগড়

খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে পরবর্তী ১৫ শত বছরের বেশি সময়কাল বাংলার ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে এই ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শন। মৌজ আমলে এই স্থানটিকে পুণ্ড্রো নগর নামে পরিচিত ছিল। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর তীরে মহাস্থানগড় অবস্থিত। এখানে অনেক নিদর্শন গুলোর মধ্যে রয়েছে চওড়া খাদ বিশিষ্ট প্রাচীন দুর্গ। প্রাচীন ব্রাক্ষী শিলালিপি।


মন্দিরসহ অন্যান্য ধর্মীয় ভাবনাবশেষ। পুরা মাটির ফলক ভাস্কর্য ধাতব মুদ্রা পতি। আরো আছে ৩.৩৫ মিটার লম্বা খোদায় পাথর। ১৯২৮ সাল ও ১৯২৯ সালে মহাস্থানগরে প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ শুরু হয়। এর দীর্ঘদিন পর ১৯৬০-৬১ সালে এবং পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে দুর্গের বিভিন্ন অংশ উৎখনন করা হয়। ১৯৯৩ সালে ফ্রান্স সরকার ও বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে মহাস্থানগড় খন্ড কাজ শুরু করে।

এতে এই ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শন গুলো এক নতুন মাত্রা যোগ পায়। পরে ২০০০ সালে মাজারের পশ্চিম পাশে খনন কাজ শুরু করা হয়। কথিত আছে হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী রহমাতুল্লাহ এর মাজার শরীফ রয়েছে এই মহাস্থানগরে। প্রাচীন ইতিহাস থেকে জানা যায় তিনি মাছের পিঠে আহরণ করে এই বরেন্দ্রভূমিতে আসেন। তাই তাকে বলা হয় মাহি সোয়ার।

আরো জানা যায় হযরত মীর বোরহান নামক এক মুসলমান এখানে বাস করতেন। পুত্র মানব করার জন্য গরু কোরবানির অপরাধে রাজা পরশুরাম তার বলির আদেশ দিয়েছিলেন তাকে সাহায্য করতেই মাহি সওয়ার আগমন ঘটে। বগুড়ায় আরো একটি ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শন আছে সেটা হল বেহুলার বাসর ঘর। যেটা সম্রাট অশোক নির্মাণ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।

এর উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট এবং স্তম্ভের পূর্বাধ্যে রয়েছে ২৪ কোন বিশিষ্ট চৌবাচ্চা সাদৃশ্য একটি বাথরুম। এটা বেহুলার বাসর ঘর নামে বেশি পরিচিত।

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারী ঐতিহাসিক নিদর্শন টি ৭৮১ থেকে ৮২১ খ্রিস্টাব্দে রাজা পাল ধর্মপালের শাসনামলে নির্মিত হয়। পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলায় অবস্থিত। নওগাঁ বালুডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ড হতে সরাসরি বাসযোগে এই পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে যাওয়া যায়। পাহাড়পুর বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্গত। এটা পাহাড়পুর গ্রামে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার অবস্থিত।


পাহাড়পুরের প্রাচীন নাম সোমপুর। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এখানে একটি জাদুঘর রেস্ট হাউস ও কয়েকটি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করেছে। পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের জন্য ১৭৭ টি কক্ষ আছে। এছাড়া ওইখানে মন্দির রান্নাঘর খাবার ঘর ও পাকা নর্দমা আছে। আরও এখানে পাওয়া গেছে জীবজন্তুর মূর্তি ও টেরাকোটা। মূল ভূমি থেকে এই বিহারটির ২৪ মিটার উঁচু ঘর রয়েছে। প্রতিবছর এখানে অনেক দেশি-বিদেশি পর্যটক ও সাধারণ মানুষের সমাগম ঘটে।

লালবাগ কেল্লা

ঢাকার দক্ষিণ পশ্চিমে বুড়িগঙ্গাা নদীর তীরে ১৬৭৮ সালে লালবাগ কেল্লা নির্মাণ করা হয়। আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা মোঃ আজম শাহ এই দুর্গটি নির্মাণ কাজ শুরু করলেও শেষ করতে পারেনি। এই দুর্গতি যখন নির্মাণ কাজ শুরু হয় তার প্রায় এক বছর পর তার বাবার ডাকে তিনি দিল্লিতে চলে যায়। সেখানকার মারাঠা বিদ্রোহ দমন করার জন্য। তখন অনেকেই ভাবনায় আসে এই দুর্গ আদর্শ শেষ করতে পারবেন কিনা। 


কিন্তু সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে তৎকালীন নবাব শায়েস্তাকা পুনরায় লালবাগ কেল্লা নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এবং পুরো উদ্যমে কাজ চালিয়ে যান। তবে শায়েস্তা খা নির্মাণ কাজ শুরু করার পর চার বছরের মাথায় আবার বন্ধ হয়ে যায়। শায়েস্তা খাঁর মেয়ে পরী বিবি মারা যাওয়ার জন্য লালবাগ কেল্লা নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকে। পরীর বিবি মারা যাওয়ার পর তাকে এই লালবাগ কেল্লার মাঝেই সময় তো করা হয়।।

তিনটি বিশাল দরজা রয়েছে এই লালবাগ কেল্লায়। এর একটি দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে জনসাধারণের জন্য। এই দরজা দিয়ে ঢুকলে বরাবর চোখে পরে পরী বিবির সমাধি।দেশেরকমাত্র ঐতিহাসিক স্থান যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে কষ্টিপাথর মার্বেল পাথর বিভিন্ন রংবেরঙের টালি এই লালবাগ কেল্লায়। বাংলাদেশের আর কোন ঐতিহাসিক স্থান বা নিদর্শনে এত কিছুর সংমিশ্রণ দেখা যায়নি। 

লালবাগ কেল্লায় যতগুলো নিদর্শন আছে। প্রায় প্রতিদিন হাজার হাজার দেশী-বিদেশি দর্শনার্থী দেখতে আসে ঢাকারে লালবাগ কেল্লার দুর্গটি। দুর্গের দক্ষিণে গোপন প্রবেশপথ এবং একটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ রয়েছে। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গরমকালে সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত লালবাগ কেল্লা খোলা থাকে। তবে দুপুরে আধা ঘন্টার জন্য বন্ধ থাকে এটা। শীতকালে সকাল ন'টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে। শীতকালেও দুপুরে আধা ঘন্টা বন্ধ থাকে।

আহসান মঞ্জিল

আহসান মঞ্জিল ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে নির্মিত বাংলার নবাবদের রাজপ্রাসাদ। মুঘল আমলের জামালপুর পরগনার জমিদার শেখ এনায়েত উল্লাহ এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। ১৮ শতকে তার পুত্র শেখ মতিউল্লাহ আসার থেকে বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি করে দেন। ১৮৩০ সালে খাজা আলিমুল্লাহ ফরাসীদের নিকট থেকে এটিকে ক্রয় করে আবার প্রাসাদের পরিণত করেন।


এই প্রসাদ কে কেন্দ্র করে খাজা আব্দুল গনি একটি প্রধান ভবন নির্মাণ করেন। তিনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লার নাম অনুসারে ভবনটি নির্মাণ করেন আহসান মঞ্জিল। ১৮৮৮ সালে ঘূর্ণিঝড়ে এবং ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে এই ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে তা মেরামত করা হয়। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রসাবটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর এর প্রাচীন ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হয়।

এই প্রাসাদে রয়েছে লম্বা বারান্দা জলসাঘর দরবার হল এবং রংমহল। বর্তমানে একটি জাদুকার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আহসান মঞ্জিল বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন ও স্থাপত্য।

ময়নামতি

কুমিল্লা অবস্থিত বাংলাদেশের আরেকটি ঐতিহাসিক স্থান ময়নামতি। লালমাই অঞ্চলের প্রাচীনতম সভ্যতা একটি নিদর্শন হল ময়নামতি পত্নস্থল। ময়নামতিতে খননকৃত যেসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায় তার মধ্যে শালবন বিহার অন্যতম। এই বিহারটি অবস্থিত কোটবাড়ি বর্ডারের কাছে। এই বিহারটির পাশে কোন এক সময় ঘন জঙ্গল ছিল এসব জঙ্গলে শালো গজারী ছিল বলে এর নাম হয়েছিল শালবন বিহার।


এর পাশে অবস্থিত একটি গ্রামের নাম শালবনপুর। অষ্টম শতকের রাজা মানিক চন্দ্রের স্ত্রী ময়নামতির কাহিনীর এই জায়গার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। এটি বৈদ্য সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্র ছিল তবে এখানে বৈদ্য ও জৈন ধর্মেরও নিদর্শন পাওয়া গেছে। এখানকার অন্যান্য নিদর্শন এর মধ্যে রয়েছে জীবজন্তুর অঙ্কিত পোড়ামাটির ফলক যেমন বেজির সঙ্গে যুদ্ধরত বোখরা সাপ আগুয়ানহাত ইত্যাদি।

এখানকার জাদুঘরে বিভিন্ন মুদ্রা ও পাথরের ফলকের নিদর্শন রয়েছে। এই দর্শনীয় স্থানটি দেখতে প্রতিদিন বিপুল পর্যটকের সমাগম ঘটে। ঢাকা থেকে ১১৫ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লার ময়নামতির অবস্থান।

লেখকের মন্তব্য

বাংলাদেশে অনেক ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শন রয়েছে এর থেকে মাত্র কয়েকটি আলোচনা করেছি। এসব ঐতিহাসিক স্থানের দর্শন রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। এসব স্থান থেকে বিদেশি পর্যটক এসে বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে। এতে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। এসব ঐতিহাসিক স্থানন্দর্ষণ সম্পর্কে সামান্য আলোচনা করেছি যদি এই লেখাটি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে একটি লাইক দিবেন এবং বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url