রাজশাহী শহরের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য
প্রিয় পাঠক, আপনারা কেমন আছেন। বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলাতেই অনেক সুন্দর কিছু না কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এমনি আমাদের রাজশাহী জেলাতেও অনেক সুন্দর সুন্দর ও দর্শনীয় স্থান আছে। সারাদিনের কর্মব্যস্ত মধ্যে কার না একটু ঘুরতে ভালো লাগে। রাজশাহী শহরের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আপনাদের আজ বিস্তারিত আলোচনা করব আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। আপনি যদি মনোযোগ সহকারে এই আর্টিকেলটি পরেন তাহলে দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে আপনি জেনে নিতে পারবেন।
রাজশাহী শহরের দর্শনীয় স্থান ঃ
শহীদ জিয়া শিশু পার্ক
রাজশাহী শহরের পাশে নওদাপাড়া অবস্থিত বড় বোন গ্রামে শহীদজিয়া শিশু পার্ক বিনোদনের জন্য প্রধান আকর্ষণ। ১৯৯৫ সালের রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এই শিশু পার্ক টি র নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন। ২০০৫ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে এই পার্কটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। যদিও এই শিশু পার্ক টি কাজ শুরু হয়েছিল এক বছর আগেই। ২০০৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে জনসাধারণের জন্য এটি খুলে দেওয়া হয়।
তৎকালীন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সময় মন্ত্রী আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া এই পার্কটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন ঘোষণা করেন। রাজশাহী শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নওদাপাড়ায় অবস্থিত এই শিশু পার্ক। মন চাইলে আপনি আপনার ছোট বাচ্চাদের নিয়ে এই পার্কটিতে ঘুরে আসতে পারেন। এই পার্কের প্রবেশ মূল্য ২৫ টাকা মাত্র।
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর
রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্র হেতেম খা অবস্থিত বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর এটি। নাটোরের দীঘা পাটিয়া রাজ পরিবারের জমিদার রায়, রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল এর শিক্ষক রামপ্রসাদ চন্দ্রের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে এই রাজশাহীর বরেন্দ্র জাদুঘর প্রতিষ্ঠায়। রাজশাহী বিভিন্ন স্থান থেকে অনুসন্ধান করে প্রায় ৩২ টি নিদর্শন সংগ্রহ করেন।
এসব নিদর্শন গুলো সংরক্ষণ করার জন্য তখনকার জমিদার শরৎকুমার রায় জমি দান করেন সেই জমির উপরেই জাদুঘরটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯১৩ সালে এই নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ১৯১৩ সালের ১৩ই নভেম্বর তৎকালীন গভর্নর কারমাইকেল গরেন্দ্র জাদুঘাটি উদ্বোধন ঘোষণা করেন। প্রায় ৯০০০এর বেশি নিদর্শন সংরক্ষিত করা আছে। আপনি এই বরেন্দের জাদুঘরটি পরিদর্শন করে অনেক জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রত্যেকদিন এ জাদুঘরটি খোলা থাকে।
টি - বাঁধ
পদ্মা নদীর পাশেই রাজশাহী শহর অবস্থিত। আপনি রাজশাহী শহরে আসলেন আর পদ্মার টি- বাধ এ যাবেন না এটা তো হয় না। রাজশাহী শহরটা যেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন তেমনি সাজানো গোছানো একেবারে ছিমছাম। ইবাদের সামনেই বিস্তীর্ণ পদ্মা নদী। যারা সকালবেলায় হাঁটাহাঁটি করেন তারা এই টিবাদের উপর দিয়ে হেঁটে শরীরচর্চা করেন এবং গায়ে সু বাতাস মেখে সবাই চলে।
আর বিকাল বেলা আসে দলে দলে দর্শনার্থীরা। পদ্মা নদীর অপরূপ শোভা দেখতে। আর ঘাটে বাঁধা থাকে সারি সারি নৌকা। আবার অনেকেই আছেন এসব নৌকায় উঠে নদীর ভিতর দিয়ে ঘুরতে যায়। এখানে আবার বিকালে অস্থায়ী ফুচকা বাদাম চটপটির দোকান বসে। এটা রাজশাহী শহরের গর্ব। এখানে নিরাপত্তা রক্ষীদের টহল থাকে যাতে কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়।
রাজশাহী জিরো পয়েন্ট থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আপনি অটোতে করে যেতে পারবেন রাজশাহী শহরের যেকোনো জায়গা থেকে। এই বাঁধটি দেখতে T এর মত , তাই একে সবাই টি বাঁধ বলে জানে ।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা
ব্রিটিশ আমলে ইংরেজরা রাজশাহীতে বা আমাদের দেশের ভোটদর বা রেস খেলার প্রচলন শুরু করে। এসব খেলা দেখতে বা বাজি ধরার জন্য অনেক উত্তেজনা সৃষ্টি হতো। এসব রেসের জন্য অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসতে। অনেক মানুষ এসব খেলায় নিঃস্ব হয়েছেন। মূলত আহ্বান হয়েছেন আয়োজক রাই। পদ্মার পাড়েছিল রাজশাহী শহরের রেসকোর্স।
এখন এই রেসকোর্স রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা। এই উদ্যানটি ও চিড়িয়াখানা তৎকালীন মন্ত্রী শহীদ এ এইচ এম কামরুজ্জামান হেনা ও তখনকার জেলা প্রশাসক এর অনেক ভূমিকা ছিল। তাদের প্রচেষ্টায় 1972 সালে এই চিড়িয়াখানা টি স্থাপিত হয়। এই চিড়িয়াখানাটিতে রয়েছে বাঘ হরিণ অজগর সাপ পেঁচা গাধা সিংহ বাজপাখি ময়না টিয়া সহ অনেক রকমের জীবজন্তু। বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষা সফরে আসে রাজশাহীর এই চিড়িয়াখানায়।
রাজশাহীর কেন্দ্র উদ্যান ও চিড়িয়াখানা প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে প্রবেশ করতে পারে তবে জনপ্রতি পঁচিশ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এবং পিকনিকের জন্য আলাদা টাকা বা ফি জমা দিতে হয়। আপনি আপনার মনকে উৎফুল্ল করতে এই চিড়িয়াখানাটি ঘুরে আসতে পারেন। অবশ্যই আপনার ভালো লাগবে।
পদ্মা গার্ডেন
রাজশাহী শহর উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ বিভাগীয় শহর। রাজশাহী শহরের জিরো পয়েন্টের পাশে পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত এই পদ্মা গার্ডেন। রাজশাহীর প্রায় অধিকাংশ মানুষই প্রতিদিন একটু সময় পেলেই আড্ডা দেয় এই পদ্মা গার্ডেনে এসে। এই পদ্মা গার্ডেনে সকল বয়সী মানুষকেই দেখা যায় আড্ডা দিতে। রাজশাহী জিরো পয়েন্ট সাহেব বাজার থেকে কয়েক মিনিট হাঁটলেই আপনি যেতে পারবেন পদ্মা গার্ডেনের মূল পথে।
পদ্মা গার্ডেনটি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের অধীনে নির্মিত। এখানে ফুচকা চটপটি চা খেতে খেতে গল্প করার জন্য একটা সঠিক জায়গা। ছোট আকারে একটি মুক্তমঞ্চ আছে। এখানে প্রতিদিন বিভিন্ন সামাজিক অঙ্গ সংগঠন অনুষ্ঠান করে থাকে। এই পদ্মা গার্ডেন থেকে পশ্চিম দিকে গেলেই আপনার দেখতে পারবেন হযরত শাহমখদুম ( রাঃ) এর মাজার।
প্রতিদিনই এখানে প্রচুর ভিড় থাকে। তবে বেশি বীর হয় প্রতি শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিনে বিনোদন প্রেমীদের অনেক ভিড় থাকে। দেশের অনেক প্রান্ত থেকে মানুষ রাজশাহী শহরে ঘুরতে আসলে পদ্মা নদীর চর ও পদ্মা গার্ডেনে যেতে পারেন। এতে আপনার অনেক ভালো লাগবে এবং মনও উথফুল্ল থাকবে।
লালন শাহ মুক্ত মঞ্চ
রাজশাহী শহরের পাঠানপাড়া অবস্থিত লালন শাহ মুক্তমঞ্চ। ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে এই এই মুক্ত মানুষটি স্থাপন করা হয়। মার্মি কবি লালনসার নামে এটি নামকরণ করা হয়। ২০১৩ সালের পাঠানপাড়ায় পঞ্চাননগর জমির উপর রাজশাহী স্টিকার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয় এই লালন শাহ মুক্তমঞ্চ টি নির্মাণ কাজ শেষ করে।
২০১৩ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর তৎকালীন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়নের সময় মন্ত্রী উদ্বোধন ঘোষণা করে। এই লালনশা পার্কে পাঁচ থেকে ছয় হাজার মানুষ একসাথে অবস্থান করতে পারে। এখানে একটি মুক্তমঞ্চ আছে। এই মঞ্চে মুক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সুবিধাও আছে। পদ্মা নদীর টানে প্রকৃতির নির্মল বাতাসে মুক্ত হাওয়া খেতে সকল বয়সী মানুষ এখানে আসেন এবং সময় কাটিয়ে থাকে।
এই মুক্ত মঞ্চে বসে থাকলে পদ্মা নদীর হাওয়া আপনার শরীর ও মনকে অনেক আনন্দ দিবে। এই লালন শাহ মুক্ত মঞ্চে প্রতিদিনই কোন না কোন ছোট বড় অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আমাদের সাথে এতক্ষণ থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি এই লেখাটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। রাজশাহীর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আলোচনা করেছি যদি আপনাদের এই লেখাটি ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই একটা লাইক দিবেন এবং বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করবেন।
আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নতুন নতুন আর্টিকেল লিখে পাবলিশ করি। যদি আপনাদের কোন বিষয়ে জানার থাকে তবে কমেন্ট করে জানাবেন অবশ্যই আমরা সে বিষয়ে লিখে আপনাদের সামনে হাজির করব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url