Post Page After Menubar Ad

পানি দূষণের কারন ও প্রতিকার সম্পর্কে আমাদের করনীয়



আমাদের চারপাশে ঘিরে আছে পানি। প্রাকৃতিক উৎস যেমন বৃষ্টি নদী সমুদ্র ইত্যাদি থেকে আমরা পানি পেয়ে থাকি। মানুষের তৈরি উৎস যেমন দিঘী পুকুর খুব ইত্যাদি থেকেও পানি পেয়ে থাকি। পানি ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত বেঁচে থাকতে পারিনা। পানি দূষণের প্রধান কারণ মানুষের কর্মকান্ড। কৃষিকাজে ব্যবহৃত কীটনাশক কাল কারখানার রাসানিক দ্রব্য গৃহস্থলীর মাধ্যমে পানি দূষিত হয়। এছাড়া নদী বা পুকুরে গরু ছাগলকে গোসল করানো এবং কাপড়-চোপড় ধোয়া থেকেও পানি দূষিত হয়।


কৃষিতে কীটনাশক এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে আমরা পানি দূষণ রোধ করতে পারি। এছাড়া পুকুর নদী বা সাগরের ময়লা আবর্জনা না পেলে পানি দূষণ রোধ করতে পারি। সমুদ্র সৈকতে পড়ে থাকা ময়লা এবং খাল বিল কিংবা নদীতে ভাসমান ময়লা আবর্জনা কুড়িয়ে আমরা পানি পরিষ্কার রাখতে পারি। 

ভূমিকা

মানুষের কর্মকান্ড পানি দূষণের প্রধান কারণ। কৃষি কাজে ব্যবহৃত কীটনাশক, কলকারখানার রাসানিক দ্রব্য, গৃহস্থলী বজ্রের মাধ্যমে পানি দূষিত হয়। এছাড়া নদী বা পুকুরে গরু ছাগল গোসল করানো বা কাপড়চোপড় ধোঁয়া থেকে পানি দূষিত হয়। কুকুর বা নদীতে বাস সমুদ্র ময়লা আবর্জনা না ফেলে আমরা পানি দূষণমুক্ত করতে পারি। সমুদ্রের সৈকতে পড়ে থাকা ময়লা আবর্জনা পুড়িয়ে আমরা পানির পরিষ্কার রাখতে পারি।

পানি দূষণের কারণ

আমরা যেসব পানি প্রকৃতি থেকে পাই সেসব পানির সাথে ক্ষতিকর পদার্থ মিশে পানি দূষিত হয়। এসব ক্ষতিকর পদার্থ জন্য পানির ক্ষতিকর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সারা বিশ্বের প্রায় ৭১ শতাংশই পানি সেই পানির প্রায় এক শতাংশ কম আমাদের ভালো খাবার বা সুপ্রিয় পানি। আমরা সরাসরি যে পানি ব্যবহার করি বা ভালো পানি ব্যবহার করি তার যোগান আসলে খুবই কম। এমতাবস্থায় আমাদের সবচেয়ে বেশি সচেতন হওয়া দরকার।

যাতে যে এক শতাংশ কম আমরা ভালো পানি পাই তা যেন যথাযথ ব্যবহারযোগ্য হয় বা দূষণমুক্ত হয়। জীববৈচিত্র্য কে প্রভাবিত করে এই দূষিত পানি। এটি একটি আমাদের বৈশ্বিক সমস্যা। এই দূষিত পানি সারা পৃথিবী জুড়ে পানিবাহিত রোগের প্রধান কারণ। পানি বাহিত রোগে প্রতিদিন সারা পৃথিবীতে প্রায় ১৫০০ বেশি লোকের মৃত্যু ঘটে। বাংলাদেশেও মৃত্যু ঘটে আনুমানিক ৮৫ জন মানুষ প্রতিদিন এই পানি বাহিত রোগে মারা যায়।

বিভিন্ন কারণে পানি দূষিত হতে পারে। যেমন মলমূত্র, জমির কীটনাশক, এসিড, পারদ ইত্যাদি থেকেও দূষিত হতে পারে। আবার কঠিন পদার্থ যেমন লবণ ধাতব পদার্থ বিভিন্ন প্রকার সার ইত্যাদি থেকেও দূষিত হতে পারে। আমাদের প্রতিদিনের বাড়িঘরের যেসব কাজে ব্যবহৃত পানি ব্যবহার করি এবং হোটেলের থেকে খাদ্যদ্রব্যের যে নোংরা আংশ ফেলে দেওয়া হয় পচা তরকারির অংশ মলমূত্র সাবান ডিটারজেন্ট ইত্যাদি পানিতে মিশেও দূষিত হয়।

এসব থেকে বিভিন্ন রোগ জীবাণু ব্যাকটেরিয়া তাদের মিশ্রিত এসব নোংরা পানি বিভিন্ন নর্দমা দিয়ে নদনদী খাল মিলে সমুদ্রের জলে পড়ে এগুলো দূষণ ঘটায়। আমরা প্রায়ই জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করি । এসব কীটনাশক ছত্রাকনাশক আগাসা নাশক ইত্যাদি মাটিতে মিশে থাকে এবং পানির সাথে এগুলো ধুয়ে পুকুর জলাশয় ইত্যাদি থেকে মিশেও পানি দূষিত করে।

পানি দূষণ রোধে করণীয়

২২ শে মার্চ বিশ্ব পানি দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে ১৯৯৩ সাল থেকে। সারা পৃথিবী জুড়ে পানির প্রয়োজনীয়তা নিরাপদ পানির সংস্থান পানিপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করতেই এই দিবসের সূচনা। প্রতিবছর পানি দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরতে প্রতিবছর একটি প্রতিবাদ্য নির্বাচন করা হয়। আমরা যারা উন্নয়নশীল দেশ আছি পানিকে সেই ভাবে আমরা গুরুত্ব সহকারে নেই না। অথচ ভালো পানির অভাব আমাদের দিন দিন বেড়েই চলছে।

আর কমে যাচ্ছে বিশুদ্ধ পানির উৎস। আমরা সাধারণত দুটি উৎস থেকে সুপ্রিয় পানি পেয়ে থাকে যেমন ভূগর্ভস্থ ও ভু উপরিস্থ। ভূ-উপরিষ্ঠ পানি থেকে যে পানি আমরা পেয়ে থাকি তার ব্যবহার আজকাল নেই বললেই চলে। ফলে ও গর্ভস্থ পানির উপর অনেকটাই চাপ সৃষ্টি হচ্ছে এবং আস্তে আস্তে তার নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। আমরা বিশুদ্ধ পানির জন্য ভূগর্ভস্থ পানিকেই যথাসাধ্য ব্যবহার করতে হচ্ছে। 
এটা যেহেতু আমাদের অসীম প্রাকৃতিক সম্পদ এটার অপচয় অবহেলা মাত্তা তিক্ত ব্যবহার এই গর্ভস্থ পানিকে দিন দিন শেষ করে দিচ্ছে। তাই এই গর্ভস্থ পানি ব্যবহারে আমাদের আরো সচেতন হওয়া দরকার পরিমিত ভাবে এই পানি ব্যবহার করা দরকার। না হলে এ বিশুদ্ধ পানির সমস্যা থেকে আমাদের উত্তরণের আর কোন পথ নেই।

পানি বাহিত রোগের কারন

পানি ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত চলতে পারি না। পানি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশুদ্ধ পানি খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি দূষিত পানি পান করি তাহলে আমাদের শরীরে কলেরা জন্ডিস টাইফয়েড ইত্যাদি অসুখ হতে পারে। দূষিত পানি খাওয়ার ফলে আমাদের পানি বাহিত রোগের সৃষ্টি হয়। পানি ভাই তো রোগের মধ্যে একটি হলো টাইপ হোয়েট যা আমরা দূষিত পানি পান করলে বা দূষিত খাবার খেলে এটি হতে পারে।

যেসব জায়গায় বিশুদ্ধ পানি নেই সেসব জায়গায় টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা অনেক বেশি হয়। বিষাদ ব্যক্তি এসব টাইফয়েড আক্রান্ত হয় অন্যান্য ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলেও তাদেরও এই রোগের ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। মানিক ভাই তো রোগের আর একটা হল কলেরা। কলেরা একটি মারাত্মক রোগ এটি চিকিৎসা না করলে মৃত্যু হতে পারে।

কলেরা সাধারণত দূষিত পানি দ্বারা ছাড়াই বিশেষ করে খারাপ ল্যাট্রিন খোলা জায়গা থেকে যেমন কুকুরজলাশয় থেকে পানি ব্যবহার করে থাকে এসব জায়গা থেকে কলেরার সৃষ্টি হতে পারে। কলেরা একটি সংক্রামণ্ রোগ এটা সহজেই আক্রমন করতে পারে। এটি আক্রমণের ফলে কয়েকদিন বা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মানুষ প্রাণঘাতী হতে পারে। পানি বাহিত রোগের মধ্যে আর একটা রোগ হলো আমাশয়। এটি দূষিত খাবার ও দূষিত পানির মাধ্যমেও ছাড়ায়।

এমন এমন জায়গা আছে যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না সেই সব জায়গাতে আমার সারা রোগের সৃষ্টি বেশি হয়। যদি কোন ব্যক্তির আমাশার সংক্রমণ ঘটে একটি রক্তের সাথে মিশিয়ে ডায়রিয়া হতে পারে যার ফলাফল মারাত্মক ডিহাইড্রেশন পর্যন্ত হতে পারে। আমাশা সৃষ্টিকারী রোগ জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া দূষিত খাদ্য ও দূষিত পানির দ্বারা মানুষের মলের সাথে মিশে মানুষের সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে এটি ছড়াতে পারে।

পানি দূষণের প্রতিকার বা প্রতিরোধ

কৃষিতে কীটনাশক এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে আমরা আমরা পানি দূষণ রোধ করতে পারি। সমুদ্র থেকে যেসব খনিজ তেল উত্তোলন করা হয় বা জাহাজে পরিবহন করা হয় সেই সব তেল সমুদ্র যেন ছড়িয়ে না পড়ে আমাদের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের যেসব জৈব বর্জ্য হয় সেসব জৈব বর্জ্য থেকে যাতে জল দূষণ হতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিল্প কারখানার বর্জ্য কে পরিশোধন করে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

সমুদ্রে বা নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়া থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পানির অপচয় রোধে আমাদের জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমরা উন্নত প্রযুক্তি বসিয়ে যেমন আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণ প্লান বসিয়ে কলকারখানা, হাসপাতাল, অন্যান্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দূষিত পানি ও আবর্জনা কে জীবাণুমুক্ত করে পরিশোধন করে নদনদী বা সমুদ্রে নিষ্কাশন করতে হবে। পানি বিশুদ্ধকরণের সবচেয়ে ভালো উপায় হল পানি ফুটিয়ে পান করা।

এটি একটি পুরাতন কৌশল। বিশুদ্ধ পানিকে আমরা যদি ৬০° সেলসিয়াস বা তার বেশি মাত্রায় ৫ থেকে ২৫ মিনিট ধরে ফোঁটায় তাহলে এর জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। সেই পানি আমরা যদি ঠান্ডা করে থেকে পরিষ্কার পাত্রে রেখে সংরক্ষণ করতে পারি তাহলে সেই পানি খেলে আমাদের অসুখ বিষুক অনেকটাই কমে যাবে। আমরা যেসব পাত্রে বা গ্লাসে পানি খাই সেই পাত্র বা গ্লাসও পরিষ্কার আছে কিনা সেটি সঠিকভাবে দেখতে হবে।

আবার আমরা ফিল্টারের মাধ্যমেও বিশুদ্ধ পানি পেতে পারি। আজকাল অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আমাদের এই ফিল্টার ব্যবহার। আমাদের দেশে এখন অনেক ধরনের ফিল্টার পাওয়া যায় যেগুলো দিয়ে আমরা পানি জীবাণুমুক্ত করতে পারি। বাজারে সাধারণত দুই ধরনের ফিল্টার পাওয়া যায়। যার একটি নাম সিরামিক ফিল্ডার এবং অন্যটি নাম রিভার অসমোসিস ফিল্টার। বাংলাদেশের সাধারণত বেশিরভাগ মানুষ সিরামিক ফিল্টার ব্যবহার করে থাকে।

পানি বিশুদ্ধকরণ

মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন পানি হল নিরাপদ পানি। কিছু পানি আছে যা মানুষের জন্য নিরাপদ যেমন নলকূপের পানি। আবার কিছু পানি মানুষের পানের জন্য নিরাপদ নয় যেমন কুকুর ও নদীর পানি। তাই পান করার এবং রান্নার কাজে ব্যবহার করার পূর্বে নিরাপদ পানি ব্যবহার করা প্রয়োজন। মানুষের ব্যবহারের জন্য পানিকে গ্রহণযোগ্য নিরাপদ করায় হল পানি বিশুদ্ধকরণ। পানি নিরাপদ করার কিছু পুরাতন উপায় বর্ণনা করা হলো।

যেমন ছাকনি পদ্ধতি। ছাকনি দিয়ে পানি পরিষ্কার করার প্রক্রিয়ায় হল ছাকনি পদ্ধতি। পাতলা কাপড় দিয়ে ছেঁকে পানি পরিষ্কার করা যায়। তবে এই প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত পানি পরিষ্কার হলেও তা জীবাণুমুক্ত নয়। তাই নিরাপদ পানির জন্য পানিকে ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। পানি জীবাণুমুক্ত করার একটি ভালো উপায় হল ফোটানো। জীবাণুমুক্ত ও নিরাপদ পানির জন্য ২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে পানি ফোটাতে হবে। 

এই ফোটানো পানি হল নিরাপদ পানি। আবার অনেক সময় বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসের কারণে পানি ফোটানো সম্ভব হয় না। সেসব ক্ষেত্রে ফিটকিরি, ব্লিচিং পাউডার , পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ইত্যাদি পরিমাণ মতো মিশিয়ে আমরা পানি নিরাপদ করতে পারি। তবে যে সব পানিতে আর্সেনিক আছে সেইসব পানিতে এসব প্রক্রিয়া নিরাপদ নয়।

লেখকের মন্তব্য

পানি আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ যাছাড়া আমরা এক মুহূর্ত বাঁচতে পারিনা। দূষিত পানি পান করলে আমাদের শরীরে নানা অসুখ বৃষ্টি হতে পারে। এ থেকে আমাদের সচেতন হতে হবে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করার জন্য। পানি দূষণের ফলে জলস্পানি মারা যাচ্ছে এবং জলস খাদ্যশৃঙ্খলের ব্যাঘাত করছে। এই দূষণের প্রভাব মানুষের উপর পড়ছে দূষিত পানি পান করে মানুষ ডায়রিয়া বা কলেরার মতো পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এটা কি আমাদের অনেক সচেতন হতে হবে। এই লেখাটা যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে একটা লাইক দিবেন এবং বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url