পরিবেশ দূষণের উৎস ও কারন , প্রতিকার সম্পর্কে
বেঁচে থাকার জন্য আমরা পরিবেশকে নানান ভাবে ব্যবহার করে থাকি। ফলে পরিবেশের বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তন যখন জীবের জন্য ক্ষতিকর হয় তখন তাকে আমরা পরিবেশ দূষণ বলি। বিভিন্ন ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ পরিবেশে মিশলে পরিবেশ দূষিত হয়ে থাকে। পরিবেশ দূষণ অন্যতম প্রধান কারণ হলো শিল্পায়ন। আবার বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস, ধুলি কণা, ধোঁয়া ইত্যাদি মিশে পরিবেশ দূষিত করে।
বর্তমান পৃথিবীর অনেক সমস্যার মধ্যে একটি বড় সমস্যা হলো পরিবেশ দূষণ। পরিবেশ দূষণ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন বায়ু দূষণ , পানি দূষণ, শব্দ দূষণ, মাটি দূষণ ইত্যাদি থেকেও পরিবেশ দূষিত হতে পারে।
ভূমিকা
আকাশ বাতাস পানি উৎপজ্জগত প্রাণী জগৎ নিয়েই আমাদের পরিবেশ। এগুলোকে বাদ দিয়ে আমরা বেঁচে থাকতে পারবো না। আমরা বিবেক বুদ্ধি দিয়ে নিরলস পরিশ্রম করে আমাদের চারিপাশের পরিবেশকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছি। বিভিন্ন কারণে পরিবেশ দূষিত হতে পারে, তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো শিল্পায়ন। এই শিল্পায়ন ফলে শিল্প কল কারখানার বিভিন্ন জ্বালানি পানিতে মিশে যেমন পরিবেশ দূষিত করছে। এর ফলে বিভিন্ন রকমের মানব জীবনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিভিন্ন রোগ বালাই হচ্ছে। এসব দূষণ আমাদের মানব জীবনে অনেক ক্ষতি সাধন করে থাকে
পরিবেশ দূষণের উৎস ও কারণ
পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হলো শিল্পায়ন। শিল্প কলকারখানা সচল রাখতে বিভিন্ন ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন তেল প্রাকৃতিক গ্যাস কয়লা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এইসব জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারই পরিবেশ দূষণের প্রধান উৎস। প্রয়োজনীয় খাদ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য মানুষ পরিবেশের ধ্বংস করছে। পরিবেশের বেশিরভাগ দূষণ মানুষের দৈনন্দিন কর্মকান্ডের ফলেই হয়ে থাকে।
পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষ জীব যন্ত্র ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। দূষণের কারণে মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাইতে আক্রান্ত হয়। যেমন ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ , পানিবাহিত রোগ, ত্বকের রোগ ইত্যাদি। পরিবেশ দূষণের ফলে জীবজন্তুর আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে। খাদ্যশৃঙ্খল ধ্বংস হচ্ছে অনেক জীব পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশাই বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে হিমবাহ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে।
বায়ু দূষণে মানব জীবনের প্রভাব
বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস ধূলিকণা ধোয়া অথবা দুর্গন্ধ বাহিত মিশে বায়ু দূষিত করে। প্রাকৃতিক পরিবেশে অন্যতম প্রধান হলো বায়ু যা মানুষ ও প্রাণী জগত এই বায়ু ছাড়া এক মুহূর্ত টিকতে পারবে না। কলকারখানা যানবাহন এর ধোঁয়া বায়ু দূষণের প্রধান কারণ। আরো অনেক কারণ আছে যেমন নিউক্লিয় আবর্জনা কয়লা পুড়িয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া যানবাহনের জ্বালানির পোড়া গন্ধ বাতাসে মিশে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
এছাড়া গাছপালা ময়লা আবর্জনা পোড়ানো ফলে সৃষ্ট দোয়ার মাধ্যমে বায়ু দূষিত হয়। আবার যেখানে সেখানে ময়লাফেলা এবং মলমূত্রত্যাগের ফলে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়ায়। বায়ু দূষণের ফলে পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এসিড বৃষ্টি হচ্ছে এছাড়াও মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
পানি দূষণ ও তার প্রতিক্রিয়া
পানির অপর নাম জীবন পানি ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত বেঁচে থাকতে পারিনা। পানিতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ মিশ্রিত হয়ে পানি দূষিত হয়। প্রতিনিয়ত কলকারখানা সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সেইসব কল কারখানার নির্গত রাসায়নিক পদার্থ পানিতে মিশে সেই পানি নদীর জলকে দূষিত করছে। নিষ্কাশন ও গৃহস্থলীর বজ্র অথবা কারখানার ক্ষতিকর বজ্র পদার্থের মাধ্যমে পানি দূষিত হয়।
এছাড়া ময়লা আবর্জনা পানিতে ফেলা কাপড় ধোয়া ইত্যাদির মাধ্যমেও পানি দূষিত হয়। শহর অঞ্চলের সমস্ত ড্রেন এর পানি নদীতে এসে পড়ে এই দূষিত ড্রেনের পানি নদীতে পড়ে পানি দূষিত করছে। এতে নানা রকমের পানিবাহিত রোগের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি দূষণের ফলে জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে এবং জলজ প্রানির খাদ্য শৃঙ্খলতে ব্যাঘাত ঘটছে। পানি দূষণের কারণে মানুষের কলেরা ও ডায়রিয়ার মত পানি বাহিত রোগে এবং বিভিন্ন চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
মাটি দূষণ এর প্রভাব
বিভিন্ন রকমের ক্ষতিকর বস্তু মাটিতে মেশার ফলে মাটি দূষিত হয়। কৃষি কাজে ব্যবহৃত সার ও কীটনাশক গৃহস্থলী ও হাসপাতালের বর্জ্য কলকারখানার বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও তেল ইত্যাদির মাধ্যমে মাটি দূষিত হয়। কৃষিক্ষেত্রে একটা নীরব বিপ্লব এসেছে দিন দিন উৎপাদন বৃদ্ধি করতে নানা রকমের রাসায়নিক সার ব্যবহার হচ্ছে এর ফলেও মাটি দূষণ হচ্ছে। মাটি দূষণের ফলে তা নষ্ট হয়।
গাছপালা ও পশুপাখি মারা যায় ও তার বাসস্থান ধ্বংস হয়। মাটি দূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। দূষিত মাটিতে উৎপন্ন ফসল খাদ্য হিসেবে গ্রহণের ফলে মানুষের বিভিন্ন রকম রোগ বালাই যেমন ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। প্রায় সারা বছরই আমরা জমিতে চাষাবাদ করে থাকি। এর ফলেও মাটির পানি দূষিত হচ্ছে ।
শব্দ দূষণ
শব্দ দূষণ মানুষ হওয়ার জীবজন্তুদের স্বাস্থ্যের প্রতি সাধন করে থাকে। বিনা প্রয়োজনে হর্ন বাজিয়ে উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে এবং লাউড স্পিকার বা মাইক বাজিয়ে মানুষ শব্দ দূষণ করে থাকে। কলকারখানার বড় বড় যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও শব্দ দূষণের অন্যতম কারণ। শব্দ দূষণ মানুষের মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে।
অবসন্নতা শ্রাবণশক্তি ঘুমে ব্যাঘাত ঘটানো কর্মক্ষমতা ইত্যাদি সমস্যা সব শব্দ দূষণের ফলে হয়ে থাকে। আমরা যখন তখন হন না বাজিয়ে এবং উচ্চ শব্দ সৃষ্টি না করে শব্দ দূষণ রোধ করতে পারি। এই শব্দ দূষণের ফলে মানুষের বিভিন্ন ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনে যেমন উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক অস্থিরতা বিভিন্ন রকমের সমস্যার সৃষ্টি করে আমাদের মানব জীবনে।
পরিবেশ দূষণের প্রতিকার
পরিবেশ দূষণের প্রতিকার হতে বাঁচতে হলে আমাদের বিদ্যুৎ বা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আমরা পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখতে পারি। আমরা আমাদের বাড়ির কাজ শেষে বা অফিস আদালতের কাজ শেষে প্রত্যেককে সবার অবস্থান থেকে লাইট বন্ধ রেখে ফ্যান বন্ধ রেখে আমরা বিদ্যুতের আপচায় করতে পারি। অনেক সময় আমরা গাড়ির চলার পরিবর্তে পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে চরেও আমরা প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারি।
প্রাকৃতিক সম্পদে ব্যবহার কমিয়ে আমরা পরিবেশ দূষণ রোধ করতে পারি । কলকারখানা ভদ্র ও রাসায়নিক পদার্থ তেল ইত্যাদি পরিবেশে ফেলার পূর্বে পরিশোধন করে নিতে পারি। মাটি পুকুর বা নদীতে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকতে পারি। ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে বা গাছ লাগিয়ে আমরা পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারি। পরিবেশ সংরক্ষণের অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে জন সচেতনতা বৃদ্ধি করা
লেখকের মন্তব্য
বর্তমানে পরিবেশ দূষণ একটি মারাত্মক সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান আমাদেরকেই করতে হবে। আমরা সবাই মিলে সচেতন হলেই এসব সমস্যা থেকে আমরা পরিতান পেতে পারি। পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে বা এর প্রতিকার সম্পর্কে সামান্য কিছু আলোচনা করেছি যদি এই লেখাটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই একটা লাইক দিবেন এবং বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url