Post Page After Menubar Ad

কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন



প্রিয় পাঠক, আমার ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। আপনারা কি কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান ? । তাহলে আপনারা সঠিক জায়গায় এসেছেন। আপনারা হয়তো অনেকেই কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানেন কিন্তু যারা জানেন না তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি ‌। ধৈর্য সহকারে এই আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আমাদের দেশে সকলের কাছে পরিচিত একটি মসলা হল কালোজিরা। এটা মসলা হিসেবে আমরা খাই সবাই জানি কিন্তু এই কালোজিরা বিভিন্ন চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার জন্য প্রতিশোধক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। কালোজিরার উপকারিতার কথা বর্ণনা করে শেষ করা যাবেনা।

ভূমিকা

একমাত্র মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের মহা ঔষধ হলো কালোজিরা। এর ছোট ছোট দানায় লুকিয়ে আছে হাজারো রোগের প্রতিরোধই গুনাগুন। অতি প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদী ও কবিরাজির চিকিৎসায় কালোজিরার ব্যবহার চলে আসছে। আজকে আমি কালোজিরার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে, এর উপকারিতা সম্পর্কে এবং কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব এই আর্টিকেলে। আশা করি আপনারা মনোযোগ সহকারে এই আর্টিকেলটি পড়বেন।

কালোজিরার পুষ্টিগুণ

কালোজিরাতে প্রায় ১০০ টিরও বেশি পুষ্টি উপাদান আছে। এরমধ্যে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক উপাদানই যথেষ্ট পরিমাণে আছে কালোজিরাতে। কালোজিরাতে মূল উপাদানের মধ্যে প্রায় ৩৯ শতাংশ হলো শর্করা, ৩৬ শতাংশ তেল চর্বি, ২২ শতাংশ আমিষ এবং আরো খনিজ ও ভিটামিন এ ভরপুর। এবার শুনুন জেনে না যাক ১০০ গ্রাম কালোজিরায় কি কি উপাদান আছে।

ফসফরাস (৫.২৭ মিলিগ্রাম), জিংক (৬১ মাইক্রগ্রাম ), ফোলাসিন (৬১২ আইউ ), ভিটামিন বি ১ (১৬ মাইক্রগ্রাম ), ক্যালসিয়াম (১.৮৪ মাইক্রগ্রাম ), কপার ১৭ মাইক্রগ্রাম, আইরন ১০৪ মাইক্রগ্রাম, নিয়াসিন ৫৬ মাইক্রো গ্রাম, নাইজেলন, অ্যামিনো এসিড, থাইমোকিলন, স্যাপোলিন ইত্যাদি।

কালোজিরার উপকারিতা

আমরা প্রতিদিন যে রান্নাবান্না করি তাতে কালোজিরার প্রয়োজন হয়তো পরেনা কিন্তু প্রত্যেকের রান্নাঘরেই এই কালোজিরা পাওয়া যাবে। বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করার জন্য এই কালোজিরা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আবার অনেকে কালোজিরার ভর্তা বানিয়ে খেয়ে থাকেন। কালোজিরার উপকারিতা আমরা কম বেশি সবাই জানি। এটা আমাদের কি ধরনের উপকার করে হয়তো অনেকেরই এ বিষয়ে জানা নেই। তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক কালোজিরার উপকারিতার কথা।

স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করা

আপনারা যদি নিয়মিত কালোজিরা খান তাহলে স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পাবে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। কালোজিরা তে আছে এন্টিবায়োটি ক ও অ্যান্টিসেপটিক উপাদান। এই দুটি উপাদান আমাদের মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে থাকে। এটা নিয়মিত খেলে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যা আমাদের শরীরের স্মরণ শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।

যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে

নারী ও পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কালোজিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যদি আপনি প্রতিদিন খাবারের সাথে কালোজিরা খান তাহলে পুরুষের স্পার্ম বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে ও পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এজন্য আপনাকে প্রতিদিন এক চামচ মাখন, এক চামচ কালোজিরার তেল মধুসহ, এক চামচ জয়তুনের তেল তিনবার সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ দিন সেবন করতে হবে।

মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধিতে

অনেক মহিলাদের সন্তান প্রসবের পর পর্যাপ্ত পরিমাণে বাচ্চারা বুকের দুধ পায় না। এজন্য কালোজিরা হত্যা করে নিয়মিত ভাতের সাথে খেতে হবে। রাত্রে যখন আপনি ঘুমাতে যাবেন ঠিক তার আগে আজ থেকে ১০ গ্রাম কালোজিরা গুড়া করে দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও এক চামচ কালোজিরা তেলের সমান মধুর সাথে মিশ্রিত করে প্রত্যেকদিন তিনবার করে খেতে পারেন। এভাবে নিয়মিত খেলে সন্তান প্রসবের পর যেসব মহিলাদের বুকের দুধ হয় না তাদের জন্য এটা একটা মহা ওষুধ।

অনিয়মিত ঋতুস্রাব এর ক্ষেত্রে

যেসব মা-বোনেরা এই সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য এক কাপ কাঁচা হলুদের রস বা সমপরিমাণ আতপ চাল ধোয়া পানির সাথে এক চামচ কালোজিরা তেল মিশ্রিত করে প্রত্যেকদিন তিনবার নিয়মিত খেতে হবে। এভাবে নিয়মিত খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায় অনিয়মিত ঋতুস্রাব নিরাময়ের জন্য।

মাথাব্যথা দূর করতে

মাথাব্যথা দূর করতে একটি ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে কালোজিরা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে চলেছে। এক চামচ কালোজিরা তেল আপনার মাথায় যদি ভালো করে মালিশ করেন তাহলে মাথাব্যথা অনেকটা দূর হয়ে যাবে। যদি আপনার মাথা ব্যাথা করেন তাহলে কপালের উভয় সে বুকে ও কানের পাশ দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে তিন থেকে চারবার কালোজিরার তেল মালিশ করেন দেখবেন বেশ উপকার পাবেন।

চুল পড়া বন্ধ করতে

বর্তমানে ছেলে হোক বা মেয়ে হোক উভয়ই চুল পড়া একটা বড় সমস্যা। এর জন্য আপনাকে প্রতিদিন কালোজিরা খেতে হবে একটি খেলে আপনার চুলে পুষ্টি পাবে। আর যদি আপনি বেশি সুফল পেতে চান তাহলে আপনাকে চুলের গোড়ায় কালোজিরা তেল মালিশ করতে হবে। এতে আপনি বেশ উপকার পাবেন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে

যাদের টাই একটু ডায়াবেটিস আছে এবং এটা নিয়ন্ত্রণ করতে চান তাহলে আপনাকে নিয়মিত কালোজিরা খাবেন বেশ উপকার পাবেন। অনেক চিকিৎসক আছেন টাইপ টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অনেক সময় কালোজিরা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ কালোজিরা ব্লাড সুগার এবং ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে থাকে।

প্রত্যেকদিন সকালবেলা খালি পেটে যদি এক চামচ কালোজিরা এর সাথে এক গ্লাস পানি মিশিয়ে খাবে এতে আপনার রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে। এছাড়াও ভাতের সাথে প্রত্যেক দিন দুবার করে কালোজিরা মিশিয়ে খেলে দেশ উপকার পাওয়া যায়। তবে যদি আপনি ডায়াবেটিসের ওষুধ খান তাহলে আপনাকে কালোজিরা খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

ওজন কমাতে

যদি আপনার শরীরের ওজন বেশি হয়ে থাকে, যদি আপনি ওজন কমাতে চান তাহলে গরম পানির সাথে মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে সাথে কালো জিরার গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে পারেন। এভাবে নিয়মিত খেলে আপনার ওজন দ্রুত কমাতে সহায়তা করবে। কালোজিরাতে আছে এক ধরনের ফাইবার যা আপনার শরীরের খাবার হজম করতে সহায়তা করে। এভাবে নিয়মিত খেলে খুব সহজেই আপনি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

সর্দি কাশিতে

আপনি যদি সর্দি-কাশিতে ভুলে থাকেন তাহলে অবশ্যই কালোজিরা খাবে এতে আপনার এই সমস্যা অনেকটা দূর হয়ে যাবে। সর্দি কাশিতে ভালো ফল পেতে হলে আপনাকে একটা পাতলা পরিষ্কার কাপড়ে কিছু কালোজিরা বেঁধে ভালো করে নাকে শুকতে থাকুন দেখবেন আপনার সর্দি কাশি অনেকটা নিরাময় হয়ে গেছে।

কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম

কালোজিরা খাওয়ার ধরা বাধা কোন নিয়ম নেই। তবে এর উপকারিতা পেতে হলে এটা নিয়মিত খেতে হবে। কালোজিরা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় চলুন এগুলো জেনে নিন।

* প্রত্যেকদিন সকালবেলা খালি পেটে হাতের তালুতে একটু কালোজিরা ও একটু মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

* কালোজিরা ভর্তা বানিয়ে ভাতের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।

* বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরিতে যদি কালোজিরা ব্যবহার করেন তাহলে এর পুষ্টিগুণ অনেকটা বেড়ে যায়।

* বাড়িতে আপনি যখন রুটি বানাবেন তখন এর ভিতরে কিছু কালোজিরা ছিটিয়ে দিতে পারেন।

* কালোজিরা কাঁচা অবস্থায় আপনি চিবিয়ে খেতে পারেন।

টানা ৭ দিন কালোজিরা খেলে কি হয়

প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আছে কালোজিরাতে, যা আমাদের শরীরের টিস্যু তৈরি ও মেরামত করতে সহায়তা করে। কালোজিরার ডিজে ওমেগা ৩ ও ৬ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় যা আপনাদের স্বাস্থ্য ও হার্ট রাখতে সহায়তা করে। এটি নিয়মিত খেলে আপনার হজমের সমস্যা দূর করে কারণ অতীতে আছে ফাইবার এবং রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও কালোজিরা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা হিসাবে কাজ থাকে।

কুসুম কুসুম গরম পানির সাথে লেবু ও সামান্য কালোজিরা মিশিয়ে খেলে আপনার ওজন কমাতে সহায়তা করে। পুদিনা পাতার রস, মধু ও কালোজিরা মিশিয়ে খেলে আপনাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। মধুর সাথে কালো জোড়া মিশিয়ে টানা সাত দিন খাবেন দেখবেন ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আপনার শরীরে উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে কালোজিরা খেতে পারেন। এটা খেলে আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আজকে নিশ্চয়ই এই আর্টিকেলটি পরে আপনারা কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা সম্পর্কে সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছেন। এই আর্টিকেলটি অনুসরণ করে যদি আপনারা কালোজিরা খান তাহলে আপনাদের শরীর মানসিকভাবে চাঙ্গা থাকার পাশাপাশি দৈহিকভাবেও সুস্থ থাকতে পারবেন। এই আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা জানাতে আমাদের কমেন্ট করতে পারেন। কালোজিরার উপকারিতা ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অন্যরাও যেন জানতে পারে সেজন্য এই আর্টিকেলটি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করেন। নিত্য নতুন আরো আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন ‌। ধন্যবাদ সবাইকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url