নিয়মিত তেঁতুল খেলে কি হয় বিস্তারিত জেনে রাখুন
প্রিয় পাঠক, আমার ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। নিয়মিত তেতুল খেলে কি হয় এ সম্পর্কে আপনারা জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনারা সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজ আপনাদের জানাবো নিয়ম করে তেঁতুল খেলে কি হয় ও এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবার চেষ্টা করব। আশা করি মনোযোগ সহকারে এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আপনারা হয়তো অনেকেই টক পছন্দ করে থাকেন। যারা টক পছন্দ করেন, তাদের কাছে তেতুল ভীষণ জনপ্রিয় একটি ফল। রান্নাতেও আবার অনেকেই তেতুল ব্যবহার করে থাকেন। তবে তেঁতুল খাওয়া নিয়ে ভালো মন্দ অনেক কথা প্রচলিত আছে। তাহলে জেনে নিন নিয়মিত তেতুল খেলে কি হয়।
ভূমিকা
তেতুল এমন একটি ফল যা নাম শুনলে বা দেখলেই আপনার জিভে জল চলে আসে। আজকের এই আর্টিকেলে তেতুলের পরিচিতি, তেতুলের পুষ্টিগুণ, তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম, নিয়মিত তেতুল খেলে কি উপকার পাওয়া যায় এবং অতিরিক্ত তেঁতুল খেলে না শরীরের কি কি সমস্যা হতে পারে এ নিয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে। আপনারা ধৈর্য সহকারে আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।
তেতুল পরিচিতি
টক মিষ্টি স্বাদের একটি ফল তেতুল। বাইরে থেকে একটি শক্ত কিন্তু ভিতরে বীজ সহ রাসেল একটা ফল। যদি আপনি এটা কাঁচা অবস্থায় খান তাহলে অনেকটা টক। কিন্তু কাকার সাথে সাথে এই ফলটা সাধারণত কিছু মিষ্টি হয়। সাধারণত তেতুল একটি গীষ্মকালীন ফল। তেতুলের ব্যবহারের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হল ফলটি থেকে রস বের করে তা ব্যবহার করা।
তেতুলের পুষ্টিগুণ
তেতুলের রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। ১০০ গ্রাম তেঁতুলে কি পরিমাণ পুষ্টিগন আছে চলুন তা এবার দেখে নেওয়া যায়। ২.৪ গ্রাম প্রোটিন, শর্করা ৬২.৪ গ্রাম, ফাইবার ৫.৩ গ্রাম, ভিটামিন সি ৩.৬ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৬৩০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৫ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৯৫ মিলিগ্রাম, আয়রন ২.৯ মিলিগ্রাম, এবং চর্বি আছে ০.৭ গ্রাম । এছাড়াও তেতুলে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় যা আপনার শরীরের জন্য খুব উপকারী একটি উপাদান।
তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম
তেতুল বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে। আপনি এটি কাচা খেতে পারেন । আবার আপনি পাকা তেতুল খেতে পারেন। অনেকেই কাঁচা তেতুলের চাইতে পাকা তেতুল খাওয়াটা বেশি পছন্দ করে। আপনারা আবার তেতুলের টক বানিয়ে বা তেতুলের আচার বানিয়ে খেতে পারেন।
নিয়মিত তেতুল খেলে কি উপকার পাওয়া যায়
তেতুলে আছে এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা আমাদের শরীরে প্রদাহ কমানোর মধ্য দিয়ে শরীরের বিভিন্ন রোগ দূরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত তেতুল খেলে আমাদের দৃষ্টি শক্তি উন্নতি হয়, ত্বকের পরিচর্যাতেও তেতুল ব্যবহার হয়ে থাকে এবং আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের জন্য এই ফলটির ভূমিকা অনেক। যদি আপনি সুস্থ শরীর পেতে চান তাহলে অবশ্যই সপ্তাহে কমপক্ষে ৩-৪ দিন জমিয়ে তেতুল খেতে শুরু করুন। দেখবেন এটা খেলে আপনার শরীরে কত উপকার আসে।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই প্রাকৃতিক ফলটিতে আছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি, বি এবং ই । এই ফলটিক আরো রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ,ম্যাঙ্গানিজ এবং ডায়াটারি ফাইবার। এটাতে আরো আছে এন্টিঅক্সিডেন্ট। এবার আপনারা নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন যে, তেতুল ফাল্টা আকারে ছোট হলেও এর গুনাগুন অনেক বেশি। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক তেতুলের নানাবিধ উপকারিতা সম্পর্কে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে
যদি আপনি নিয়মিত পরিমাণমতো তেতুল খান তাহলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে তেঁতুল। তেতুল একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য বেশ কার্যকরী একটা উপাদান। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কম রাখতে সহায়তা করে তেতুল। আবার তেতুলের রস ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমানোর জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডায়াবেটিস রোগটা যদি নিয়মিত বা পরিমাণ মতো তেতুল খান তাহলে অগ্নাশয় এর অক্সিডেটি ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
ত্বক উজ্জ্বল করে
যুগ যুগ ধরে ত্বকের যত্নে ব্যবহার হয়ে আসছে তেঁতুলের পাল্প। তেতুলে আছে আলফা হাইড্রক্সি এসিড। যা আমাদের ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে। তেতুলের মধ্যে আরও আছে সাইট্রিক এসিড ,ম্যালিক এসিড ,ল্যাকটিক এসিড, এবং টার টারিক এসিড। মুখের ত্বক উজ্জ্বল করতে এবং মুখের দাগ মুক্ত করতে তেতুলের রস ব্যবহার করতে পারেন। তেতুলে আছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি। বার্ধক্য রোধ ুল বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
ওজন কমাতে
যদি আপনি ওজন কমাতে চান তাহলে তেঁতুল একটা কার্যকরী উপাদান। আপনার শরীরের যদি ওজন বেশি হয় তাহলে শরীরের কিডনি লিভার এমনকি হৃদরোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যদি আপনি নিমিযে তেতুল খান তাহলে আপনার শরীরের ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমে যায়। তাই আপনি নিয়মিত তেতুল খান আপনার শরীর অতিরিক্ত চর্বি কমাতে এটা অনেকটা সহায়তা করে
হজমের সমস্যা দূর করে
যদি আপনার হজম শক্তির সমস্যা থাকে তাহলে আপনি নিমের পুতুল খেলে এই সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে। প্রাচীনকাল থেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ হিসাবে তেতুল ব্যবহার হয়ে আসছে। কারণ তেতুলে আছে প্রচুর পরিমাণে ম্যালিক এবং টার টারিক এসিড। ডায়রিয়াজনিত পেটের অনেক সময় ব্যাথা হয়ে থাকে এজন্য আপনাকে তেতুলের ছাল এবং তেঁতুল মুলের নির্যাস কার্যকর ভাবে নিরাময় করতে সহায়তা করে ।
লিভার ভালো রাখে
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে তেতুলের নির্যাস গ্রহণের ফলে লিভারের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস পায় তেতুলে থাকা বিভিন্ন উপাদান লিভারের ক্ষতির হাত থেকে লড়াই করে তেতুলখনের সমৃদ্ধ, যা আমাদের শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
চুলের যত্ন
চুলের যত্নে একটি কার্যকারী উপাদান হলো তেতুল। যদি আপনি আপনার মাথার ত্বকে তেতুলের রস লাগান তাহলে আপনার ফলিকের বৃদ্ধি ঘটাবে এবং চুলকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। তেতুলে আছে ভিটামিন সি যা চুলকে ক্ষতিকারক ইউ ভি রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। এটা চুলকে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
তেতুলের রস শরীরের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুব কার্যকরী একটা উপাদান। এটা আপনার সর্দি ,কাশি ফ্ল, দূর করতে সহায়তা করে। কারণেতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি। যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
তেতুলের অপকারিতা
প্রত্যেকটা জিনিসেরই কিছু উপকারিতা থাকলেও কোন না কোন কিছু অপকারিতাও থাকে। অতিরিক্ত পরিমাণে তেঁতুল খেলে আপনার বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে চলুন দেখা যাক কি কি সমস্যা হতে পারে।
* এসিডিটির পরিমাণ বেশি থাকায় অনেকে তেঁতুল খেলে দাঁতের সমস্যায় ভোগে থাকেন ।
* তেতুলে এসিডিটি বেশি থাকে , তাই যাদের এসিডিটির সমস্যা আছে তারা এত থেকে একটু বিরত থাকবেন ।
* অতিরিক্ত তেতুল খেলে আপনাদের রক্তচাপ কমে যেতে পারে। তাই যাদের এ সমস্যা আছে তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তেতুল খাবেন।
* যাদের আগে থেকেই হজমের সমস্যা আছে, অতিরিক্ত পরিমাণে তেঁতুল খেলে এই সমস্যারও বেশি করে দেখা দিতে পারে।
* যদি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে এর জন্য যদি আপনি কোন ওষুধ খান তাহলে অবশ্যই তেঁতুল খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
লেখকের মন্তব্য
তেতুল আমাদের মানব দেহের গুরুত্বপূর্ণ মহা ঔষধ। যা প্রকৃতি থেকে সহজেই পাওয়া যায়।এই আর্টিকেলের মাধ্যমে তেতুলের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিভিন্ন আলোচনা করেছি। তেতুল আমাদের জন্য যে কতটা উপকারী এবং কতটা উপকারী সে সম্পর্কে আপনাদের একটা ধারণা এসেছে। আশা করি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা আপনাদের প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো খুঁজে পেয়েছেন। আমি আমার এই আর্টিকেল দ্বারা তেতুল সম্পর্কে মানুষের যে ভুল ধারণা ছিল তা দূর করার চেষ্টা করেছি। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url