বাংলাদেশের সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে



বাংলাদেশের সুন্দরবন সবচেয়ে বড় এবং সমুদ্র তিরবর্তী ম্যানগ্রোভ যা উপকূল থেকে বাংলাদেশ ও ভারতীয় অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত। বাংলাদেশের সুন্দরবনকে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী হিসাবে ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। এই বন প্রায় ১০৪০০ কিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত যার এক তৃতীয় অংশ পানি। ধারণা করা হয় এই বলে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার বসবাস করে। এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য চিত্রা হরিণ।
বাংলাদেশের সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ হল রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এ ছাড়াও আছে বিভিন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী সরীসৃ প কীটপতঙ্গ এবং মাছের আবাসস্থল। জীববৈচিত্রে ভরপুর এই সুন্দরবনে অনেক মৌয়ালরা মধু সংগ্রহ করতে আসে ।

ভূমিকা 

বাংলাদেশের সুন্দরবনকে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী হিসেবে ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। এ বনের প্রধান আকর্ষণ হল রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এছাড়াও আছে বিভিন্ন ধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণী। আরো আছে অনেক চিত্রা হরিণ। আছে অনেক ধরনের গাছপালা সুন্দরী গাছ কেউরা গাছ ও গরান গাছ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সুন্দরবন বিশাল ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশের সুন্দরবনের ইতিহাস

বাংলাদেশের সুন্দরবনের নাম সুন্দরবন কি জন্য এই নাম হয়েছে এখনো জানা যায়নি। তবে ধারণা করা যায় সুন্দরবনের সুন্দরী গাছের নাম অনুসারে সম্ভবত এই সুন্দরবনের নাম হয়েছে। সুন্দরবন সম্পর্কে খুব সামান্যই তথ্য পাওয়া যায় তবে আমরা ধারণা করতে পারি হিমালয়ের ভূমিক্ষয় জনিত বালু লুরি পলি বছরের পর বছর ধরে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র পদ্মা উপকূলে বিভিন্ন স্তরের সৃষ্টি করে।

সমুদ্র নিকটবর্তী হওয়ার কারণে এসব চরে লবণাক্তই সিক্ত হয়েছে এবং এইসব জমিতে এসে পলি পড়েছে। কাল ভেদে এসব চরের জমিতে পলি মাটিতে কিছু বিভিন্ন জাতের উদ্ভিদ গড়ে উঠেছে এবং আস্তে আস্তে এগুলো ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট হিসেবে পরিচিত পেয়েছে।। সম্ভবত ১২০৩ সালে মোঘল রাজা-বাদশারা এই সুন্দরবন এজারা নেন।

১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া কোম্পানি সুন্দরবনের যখন দায়িত্ব নেয় তার আগে মোগল রাজাদের কাছেই ছিল এই বনের দায়িত্ব। তখন ওই ব্রিটিশ ইন্ডিয়া কোম্পানি এই সুন্দরবনের প্রথম মানচিত্র তৈরি করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান ভাগ হওয়ার সময় সুন্দরবনের প্রায় ছয় হাজার বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশের মধ্যে পড়ে। ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে বিশ্ব সংস্থা ইউনেস্কো অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে।

সুন্দরবনের গাছ পালা

বাংলাদেশের সুন্দরবনের আকর্ষণীয় গাছগুলির মধ্যে সবচেয়ে ভালো গাছ হল সুন্দরী গাছ। এর গাছের পাতাগুলো দেখতে খুব মসৃণ ছোট আকার বিশিষ্ট। আকার খুব ছোট সুন্দরী গাছের ফুল দেখতে কিছুটা হলুদ বর্ণ।। এ গাছ বড় হলে কিছুটা জাম গাছের মত দেখায়। এগুলো সাধারণত লম্বায় ১০ থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত কিছু হতে পারে। এ গাছের বের সাধারণত ১৫ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার এর মত হয়ে থাকে।

সুন্দরী গাছের কাঠ খুব শক্ত এবং এর রং অনেকটা গারো লাল এটা অনেকটা মূল্যবান গাছ। আগের তুলনায় সুন্দরবনের গাছ অনেকটা কমে গেছে। আরো অনেক ধরনের গাছ আছে এর মধ্যে দেওয়া ও গরান গাছ লবণাক্ত পানিতে জন্মায়। গেরা গাছ লম্বালম্বি হয়ে উঠে যায় এবং এই গাছের থেকে সাদা এক ধরনের কস বের হতে থাকে এটা খুব বিষাক্ত এবং আঠালো। গেওয়া গাছের কাঠ সাধারণত খুব হালকা এসব গাছ দিয়ে তৈরি করা হয় তবলা ও ঢোল।

আর গোরাঙ্গা সাধারণত তিন চার মিটার লম্বা হয় এ গাছগুলো একটু ঝাপড়া একটা ঝাড়ে কয়েকটা গাছ থাকে এই গাছের কাঠ অত্যন্ত শক্ত এবং গাছের ভিতরে অনেকটা লাল বর্ণ। আরো একটা গাছ আছে যার নাম কেওড়া এটা মানুষের কাজে না লাগলেও এটা সুন্দরবনের প্রাণীদের অনেক কাজে লাগে এগুলো নদীর খালের পাশে জন্মায় এসব গাছের ফলের স্বাদ টক চাটনির মত মুখরোচক।

সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। এ বোনের জীববৈচিত্র আকৃতি প্রকৃতি অবস্থান সৌন্দর্য সবই আমরা কমবেশি জানি। আমাদের অর্থনীতিতে এই বোনের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আমাদের অর্থনীতিতে সুন্দরবনের বিশেষ একটা অবদান রয়েছে যা বছরে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীব ও বৈচিত্র এখন অনেকটা হুমকির পথে। সুন্দরবনের সুন্দর সুন্দর মূল্যবান গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। 

এগুলো কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার জন্যই এগুলো হচ্ছে। একসময় এসব বনে অনেক প্রজাতির পশু পাখি বাস করত এখন কমতে কমতে অনেকটাই কমে গেছে বিলুপ্ত হওয়ার পথে অনেক প্রজাতির পাখি। সুন্দরবন বাংলাদেশের অংশে প্রায় ছয় হাজার বর্গ কিলোমিটার এবং আয়তন ৮৭০ বর্গ কিলোমিটার। এর চারপাশে রয়েছে নদী ও খাল বিলে ভরা । সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে অনেক সময় বড় বড় জাহাজ চলাচল করে।

এসব জাহাজের আঘাতে অনেক ডলফিন এর মৃত্যু ঘটে। অনেক বিপন্ন প্রাণীর আবাসস্থল এই সুন্দরবন বিভিন্ন বিপন্ন প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার মেসোবাগ গ্রেট নট পাখি জলপাই রংয়ের কাসিম দুই রকম ডলফিন ইরাবতী ও গায়েন রোনা পানির কুমিরও আছে এখানে। একাধিক প্রতিবেদনে পৃথিবীর অন্যতম বৈচিত্রপূর্ণ এলাকা হিসেবে সুন্দরবনের কথা বলা হয়েছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন

প্রাকৃতিক দুর্যোগ সাধারণত সেই সব ঘটনা যেগুলো প্রকৃতি ভাবে হয়ে থাকে। যা মানুষকে জীবন ধারণে ব্যাঘাত ঘটায় এবং মানুষের সম্পদ ও পরিবেশের বিশাল ক্ষতিসাধন করে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ গুলো হলো জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, বন্যা ঘূর্ণিঝড়, আগ্নেয়গিরি ইত্যাদি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য মানুষের অনেক সময় জীবন হানি ঘটে, ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়, ফসল নষ্ট হয় , গবাদি পশু মৃত্যু ঘটে পরিবেশের বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য ক্ষতি সাধন করে।

বড় বড় যেসব ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে সুন্দরবনের নাম জড়িয়ে আছে। ধরুন আপনার বাড়ির সামনে একটা বাঁধ আছে সেই রকম ডিঙিয়ে বন্যার পানি আসতে পারে না সে রকম সুন্দরবন একটি প্রাকৃতিক বাঁধ সেই বাঁধ ভেঙে অনেক অংশেই পানি আপনার এলাকায় প্রবেশ করতে পারে না। সুন্দরবন আমাদের একটি দেওয়ালের মতো কাজ করে। ২০০৭ সালে ১৫ নভেম্বর বরিশাল খুলনা উপকূল এলাকাতে ঘূর্ণিঝড় সিডর প্রবল বেগে আঘাত হানে।

এই ঝড়ের গতিবেগ ছিল সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার থেকে ৩১০ কিলোমিটার পর্যন্ত। সুন্দরবন এই ঝড়ের গতিবেগ অনেকটা কমিয়ে দিয়েছিল তারপরেও অনেক ক্ষতি সাধন হয়েছিল এই ঘূর্ণিঝড় সিডরের জন্য। আরো অনেক বড় বড় ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল যেমন আমপান, আইলা ইত্যাদি এসব ঝরেও অনেক ক্ষতিসাধন করে।

বাংলাদেশের সুন্দরবনের কাছে আমাদের ঋণের কোন শেষ নেই তাই এই বনকে রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে আমাদের এ বন ধ্বংস করলে চলবে না বরং একে আরো ভালো করে যত্ন নিতে হবে যার যার নিজেদের স্বার্থে বন টিকে টিকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করতে হবে। পরিশেষে বলতে পারি সুন্দরবন একটি আমাদের বাংলাদেশের জন্য জাতীয় সম্পদ।

লেখকের মন্তব্য

পরিশেষে বলতে পারি সুন্দরবন একটি আমাদের জাতীয় সম্পদ একে রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। জীবন সম্পর্কে সামান্য কিছু আলোচনা করেছি এই বনের ইতিহাস বনের গাছপালা সম্পর্কে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে। যদি এই লেখাটি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে একটি লাইক দিবেন এবং বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url