করোসল ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং গুনাগুন সম্পর্কে জানুন



প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম আশা করি আপনারা সকলেই ভাল আছেন।। আজকে আপনাদের কাছে এমন একটি ফলের পরিচয় করিয়ে দিব যে ফল ক্যান্সার প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করে। আমাদের দেশে এই ফলটি আস্তে আস্তে অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করছে। এটির নাম করোসল ফল । আজকের এই আর্টিকেলে করোসল ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আপনি যদি এই করোসল ফল সম্পর্কে না জেনে থাকেন ,তবে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুব উপকারে আসবে। আপনি মনোযোগ সহকারে এই আর্টিকেলটি পড়লে বা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

ভূমিকা
ক্যান্সার নামক শব্দটা শুনলেই আমরা ভয়ে আতঙ্কে থাকি। ক্যান্সার রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া এখনো অধরা বললেই চলে। ক্যান্সার মূলত কোনো নির্দিষ্ট কারণে হয় না। চিকিৎসকদের ভাষায় এটি একটি মাল্টি ফ্যাকেটোরিয়াল ডিজিজ। ক্যান্সার প্রতিরোধে গুনাগুন সম্পর্কে ১৯৭৬ সালে প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় এই করোসল ফলের মধ্যে। এই ফলটিকে ক্যান্সারের প্রাকৃতিক কেমোথেরাপি বা ক্যান্সার প্রতিরোধে বলা হয়ে থাকে। কথা না বাড়িয়ে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

করোসল ফল

করোসল ফল দেখতে সবুজ খোসার মতো এবং এর বাহিরের দিকটা কাটাযুক্ত। অবশ্য এর ভিতরের অংশে সাদা নরম থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে আমরা যে কেমোথেরাপি দেই ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য তার চেয়ে করসল ফল ১০০০০ গুণ বেশি শক্তিশালী। কিন্তু এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। ক্যান্সার প্রতিরোধ হিসেবে এই ফলের পক্ষে বিজ্ঞানীদের বহুবিধ মতামত পাওয়া যায়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ফলটি ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। শুধু এর ফলই নয় এই গাছের ছাল ও পাতায় লিভার সমস্যা আর্থরাইটিস সমস্যাও নিরাময় করা যায়। অনেক বিজ্ঞানী গবেষণা করে দেখেছেন এই ফলের এতটাই শক্তিশালী গুণ এই ফল খেলে ক্যান্সার রোগীর কেমোথেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না বললেই চলে। এতে শরীরের চাঙ্গা ভাব থাকে এবং শরীর দুর্বলের ভাব আসে না।

সাধারণত আমাজন নদীর উপক্যাতায় দক্ষিণ আমেরিকায় দেশগুলোতে প্রচুর করোসল জম্মায়। এছাড়াও আফ্রিকা, ব্রাজিল , চায়না , অস্ট্রেলিয়া এসব দেশেও এই ফল জন্মায়। আমাদের বাংলাদেশেও এই ফলের চাষ শুরু হয়েছে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে পরিচিত ফলের গাছ পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু হয়েছে। এতে কৃষকদের আয়ের একটা আশা দেখাচ্ছে এই করোসল ফল।

করোসল গাছে রয়েছে এনোনাসিয়াস নামক এক ধরনের যৌগ। এই যৌগ ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দেয় যা কেমোথেরাপির মত কাজ করে। ক্যান্সারের কোষ আর বাড়তে পারে না। এছাড়া নিয়মিত এই করোসল ফল খেতে পারলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। রক্তকে সুদীপ্ত করেও এই ফলের গুণ অনস্বীকার্য।

করোসল ফলের উপকারিতা

করোসল ফলের অনেক রকমের স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে কর সালফ ফলের উপকারিতা সম্পর্কে নিম্নে বর্ণনা করা হলো।

* ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে

এই ফলে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে। যা আমাদের অগ্নাশয় এর কোষ গুলোকে রক্ষা করে ইনসুলিন উৎপাদনের জন্য দায়ী। তাই এই ফল ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। করসাল ফল ফাইবারের একটি দুর্দান্ত উৎস। যা আমাদের দেহের চিনি শোষণ করে অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। এতে আমাদের রক্তের গুলুকজ এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছে তাদের জন্য এই করোসল ফল হতে পারে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের অত্যন্ত কার্যকরী একটি ফল।

* পেটের জন্য উপকারী

পাকস্থলীর ক্ষতির হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে থাকে করোসল ফলের নির্যাস। যা আমাদের হজমের উন্নতি করতে সাহায্য করে এবং অনেক রোগ আছে আলসার, গ্যাস্টরাইসিস ইত্যাদি নির্মূল করতে সাহায্য করে।

* চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে

লুটেইন নামক এন্টি অক্সিজেন যৌগ আছে এই করোসল ফালে যা আমাদের চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ফল খেলে আমাদের চোখের ছানি পড়া রোধ করে এবং ম্যাকুলার অবক্ষয়ের মতো অসুস্থতা কমাতে সাহায্য করে এর জন্য আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে।

* মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডের জন্য ভালো

করোসল ফল পটাশিয়াম সমৃদ্ধ। যা আমাদের দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং আইডিয়া ফাংশন অনেকটা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই ফলের ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের মস্তিষ্ক হার্ট এবং শরীরের অন্যান্য টিস্যুকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এই ফল খেলে আমাদের মানসিক চাপ কমাতে অনেকটা সাহায্য করে।

* কষ্ঠ কাঠিন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে

আমরা অনেকেই কুষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যায় ভুগে থাকি। এই ফল খেলে আমাদের এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও পানি রয়েছে যার জন্য আমাদের সহজে মলত্যাগ করা যায়।

* ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

অনেক বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে এই ফল ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে এবং বিভিন্ন চিকিৎসায় সহায়তা করতে পারে। ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য বা যারা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন তারা এই ফল খেলে আপনার ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারবেন।

করোসল ফলের অপকারিতা

করসল পালের উপকারিতার পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতাও আছে। এই ফল বেশি খেলে আমাদের কিডনি র ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই ফলের বীজ খেলে এতে টক্সিন নামক এক প্রকার যৌগ আছে যার কারণে আমাদের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যাদের লো প্রেসার আছে তারা এই ফল খেলে আপনার রক্তচাপ কমে যেতে পারে এতে আপনার শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

অনেকেই আছেন যারা নিয়মিত ডায়াবেটিস ও উক্ত রক্তচাপের ওষুধ গ্রহণ করেন তারা এই ফল খেলে ওষুধের সাথে রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে হলে আপনার সুগারের মাত্রা কমে গিয়ে আপনার বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেসব মহিলারা গর্ভব তী তাদের এই ফল খাওয়া এখনো প্রমাণিত হয়নি। সুতরাং এই ফল থেকে তারা এড়িয়ে চলুন। গর্ভাবস্থায় এই ফল খেলে আপনার শারীরিক ক্ষতি হতে পারে।

করোসল ফল খাওয়ার নিয়ম

করসল ফল যখন পাকে এটা দেখতে অনেকটা কলার মত এবং খেতে আপেলের মত। এই ফলের বীজে বিষাক্ত যৌগ আছে তাই এই ফলের সাথে বিজ খাওয়া উচিত নয়। যখন এই ফল পাকে তখন থাকা অবস্থায় খেলে আপনি ভালো উপকার পাবেন। এই ফল পাকা অবস্থায় গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে সবচেয়ে ভালো হয় তারপর এর খোসা ছাড়িয়ে এবং এর বীজগুলো ফেলে দিয়ে খেতে পারেন। এই ফল আপনি খেতে পারেন। এই ফলের খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে বীজগুলো ফেলে দিয়ে ব্লেন্ডারে জুস বানিয়ে খেতে পারেন।

কোথায় পাবেন এই গাছের চারা

বাংলাদেশের অনেক জেলাতেই অনেক নার্সারি করে উঠেছে। অনেক জেলাতেই এই ফলের চারা আপনি পাবেন নিচে সেগুলো উল্লেখ করা হলো ‌ মূলত এই করোছল একটি বিদেশি ফল। আমাদের দেশে এই ফল আগে একটা দেখা যেত না। বর্তমানে এই ফল বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে। বেশিরভাগ ক্যান্সারের চিকিৎসায় এই ফলটি ব্যবহার করা হচ্ছে। 

তাই বাংলাদেশের অনেক জেলায় ক্যান্সারের চিকিৎসার বিকল্প হিসাবে এই ওষুধি গাছটি বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী আমাদের দেশের সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ , চট্টগ্রাম , বরগুনা, রাজশাহী, নীলফামারী , ময়মনসিংহ সহ দেশের অনেক অঞ্চলেই এই করোসল গাছের চাষ করা হচ্ছে। রাজশাহীতেও এই করোসল গাছের কলম বিক্রি করা হয় আপনারা সেখান থেকে সংগ্রহ করতে পারেন এছাড়াও অনলাইনেও এই গাছের সন্ধান পাবেন আপনারা।

অনলাইনের মাধ্যমে নিলে আপনি সুবিধা পাবেন আপনি দেশে যে কোন স্থানেই থাকুন না কেন তা আপনি করোসল গাছের চারা ফল এগুলো সংগ্রহ করতে পারবেন।। এটি একটি ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় যার জন্য এর দাম অনেকটা বেশি। এটি চাষবাসের জন্য নির্দিষ্ট কোন আবহাওয়ার প্রয়োজন পড়ে । ফলে এটি চাষ করা বেশ কঠিন। 

প্রথমদিকে এই চারা ৫০ টাকা করে বিক্রি হতো। যখন মানুষ জানতে পেরেছে এই ফলের গুণ অনেক বেশি এবং এটি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তখন থেকে এই চারার দাম অনেক বেড়ে যায়। এর ফলের দাম আরো বেশি। এই ফলের দাম কেজিপ্রতি তিন হাজার থেকে ৩৬০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

লেখক এর মন্তব্য

যদি আপনি নিয়মিত এই ফল খান তবে অবশ্যই ভালো ফলাফল পাবেন। ইতিমধ্যে এই আর্টিকেলের মধ্যে করোসল ফলের উপকারিতা এবং অপকারিতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আশা করছি আপনারা জেনে উপকৃত হয়েছেন। যদি আপনি এই আর্টিকেলটি পড়ে কোন কিছু বুঝতে না পারেন তবে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দিবেন। পরবর্তীতে আমরা আপনাকে সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব। আমার আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে একটি লাইক করবেন এবং অন্যরা যাতে জানতে পারে তার জন্য বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url