গরমে শিশুর অসুখ ও যত্ন সম্পর্কে জানুন



প্রিয় পাঠ্য আসসালামু আলাইকুম আপনারা কেমন আছেন। এখন চলছে গরমের মৌসুম। শিশুরা উচ্চ তাপমাত্রার শিকার হয়। শিশুদের শরীর খুব স্পর্শকাতর। তাই অন্যান্য সময়ের তুলনায় গরমের সময় শিশুদের জন্য বেশ কষ্টকর ও অসহনশীল হয়ে ওঠে।গরমে শিশুদের যত্ন ও অসুখের বিষয়ে আজকের এই আর্টিকেল। আশা করি আপনারা মনোযোগ সহকারে এই আর্টিকেলটি পড়লে শিশুদের যত্ন ও অসুখের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

আমরা যারা বড় মানুষ আছি তাদের মত শিশুদের আবহাওয়ার সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে না। এজন্য তাদের গরমে সর্দি-কাশি পেট খারাপ জ্বর নানা শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। এছাড়াও ভাইরাসজনিত অনেক সংক্রমণ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন প্রদাহসহ বিভিন্ন অসুখ হতে পারে এই গরমে।

ভূমিকা

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই শিশুদের যত্নে কোন অবহেলা করা ঠিক নয়। এই গরমে শিশুদের জ্বর হলে কি করতে হবে, যদি পাতলা পায়খানা হয় তাহলে কি করতে হবে শিশুর সর্দি কাশিও নিউমোনিয়া হলে কি কি করতে হবে এই গরমে শিশুদের ঘামাচি হতে পারে গরমে শিশুরা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে এবং শিশুদের যত্ন নিতে হবে কিভাবে তার বিস্তারিত আলোচনা থাকবে এই আর্টিকেলে।

গরমে শিশুর জ্বর

এখন প্রচন্ড গরম। শিশুদের শরীরে স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় ৯৮ ডিগ্রী ফারেনহাইট হলেই জ্বর বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে জ্বর কিন্তু কোন রোগ বালাই নয়। বিভিন্ন রোগের উপসর্গ হলো জ্বর। জ্বর বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন জ্বর ইনক্রিয়েঞ্জা ভাইরাসজনিত জ্বর চিকুনগুনিয়া আম ও জল বসন্ত। এছাড়াও ম্যালেরিয়া নিউমোনিয়া টাইফয়েড ও পিছাবের সংক্রমণ ইত্যাদির কারণে জ্বর হতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাইরাসজনিত জ্বরের প্রকোপ বেশি হয়ে থাকে শিশুদের ক্ষেত্রে।

শিশুদের জ্বর হলে প্রথমে প্রাথমিকভাবে পানি দিয়ে জলপট্টি করতে হবে। তবে খুব বেশি ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা যাবে না। শিশুর পুরো শরীর কুসুম গরম পানি দিয়ে ভেজানো নরম কাপড় অথবা তোয়ালে দিয়ে কয়েকবার মুছে দিলে শরীরে তাপমাত্রা কমে যায় এতে শিশুরা খুব ভালো বোধ করে। তবে জ্বরের পরিমাণ বেশি হলে সুদের মাথায় পানি ঢালতে হবে।

শিশুদের জ্বর থাকলে তাদের ফ্যানের নিচে রাখতে হবে। জ্বর ও ব্যথা কমাতে প্রয়োজন মত প্যারাসিটামল সিরাপ নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়াতে হবে। যদি জ্বরের মাত্রা ১০২৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে ওঠে তাহলে অবশ্যই শিশুর মলদ্বারে প্যারাসিটামল সাপোজিটরি ব্যবহার করতে হবে। এবং সাথে অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার নিয়ম মেনে চলতে থাকবে।

তবে তরল খাবার বেশি বেশি করে দিতে হবে। টক জাতীয় ফল আমরা কমলালেবু ইত্যাদি খাওয়ালে বেশি ভালো হয়। এতেও যদি জোর না কমে তাহলে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ

সাধারণত কাশি হাসি নাক দিয়ে পানি পড়া খাড়া শরীরে ও হাতে পায়ে ব্যাথা অনুভব করা খাবারের অরুচি মাথা ব্যথা মুখে বিষাদ লেখা নাক দিয়ে পানি পড়া বমি বমি ভাব বমি হওয়া শরীরের বিভিন্ন অংশ দেখা দেওয়া শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া কাপুনি দিয়ে জ্বর আসা ও শিক্ষিত অনুভূতি হওয়া। শিশুদের যখন বেশি পরিমাণে জ্বর আসে কখনো কখনো খিচুনি হতে পারে। শিশুদের বেলায় জ্বর একটু বেশি হলে একটু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

গরমে সুর ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা

গরমের সময় শিশুদের সাধারণত ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানা সবচেয়ে বেশি হয়। প্রত্যেকদিন যদি শিশুরা দিনের অধিক পাতলা পায়খানা করে তাকে প্রাথমিকভাবে ডায়রিয়া বলা হয়ে থাকে। কিন্তু স্বাভাবিক পায়খানা যদি তিনবার বা তার বেশি হয় তবে সেটা ডায়রিয়া বললে গণ্য হবে না। অনেক শিশুরা আছে বুকের দুধ পান করে আবার তারা বারবার নরম পায়খানা করে সেটাও কিন্তু ডায়রিয়া নয়।

কখন বুঝবেন শিশুর ডায়রিয়া হয়েছে যখন দেখবেন শিশুর পায়খানার সাথে বেশি পরিমাণ পানি বের হচ্ছে। আবার যদি পাতলা পায়খানার সাথে রক্ত মিশ্রিত থাকে তখন সেটাকে আমাশয় বলে ধরা হয়। শিশুর যখন ডায়রিয়া হয় তখন তাদের শরীর থেকে প্রচুর পানি ও খনিজ লবণ বের হয়ে যায়। তখন শিশুদের শরীরে পানি শূন্যতা দেখা যায়।

* শিশুদের ডায়রিয়া হলে প্রথমে আপনাকে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। এতে শিশুর শরিরের পানি শূন্যতা রোধ করবে। শিশুর জন্য পানি শূন্যতা না হয় সেদিকে অবশ্যই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে এজন্য বারবার আপনাকে যতবার পাতলা পায়খানা করবে ততবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। ছোট শিশুদের কোন অবস্থাতেই মায়ের দুধ বন্ধ করা যাবে না।

ডায়রিয়া হলে স্যালাইনের পাশাপাশি শিশুদের মায়ের দুধের সাথে অন্যান্য তরল খাবার দিতে হবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত শিশুর পায়খানা স্বাভাবিক না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এসব নিয়ম মেনে চলতে হবে। এছাড়া শিশির পায়খানা সঙ্গে যদি রক্ত যায় তাহলে অবশ্যই অবহেলা না করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

সর্দি কাশি ও নিউমোনিয়া

গরমের সময় শিশুদের সর্দি কাশি ও নিউমোনিয়ার প্রভাব বেশি দেখার যায়। গরমে অতিরিক্ত শরীর ঘামার ফলে ঠান্ডা লেগে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ এবং নিউমোনিয়া পর্যন্ত হতে পারে। শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমনের সাধারণত কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যায় তা হল জ্বর, ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস, শ্বাসের সঙ্গে শো শো শব্দ, বুকের পাজোর ও খাঁচা দেবে যাওয়া, খেতে না পারা ,খাওয়ার অরুচি ,শরীর দূর্বল ইত্যাদি

গরমে ঘামাচি

গরমের সময়সূচী শরীরে ঘামাচি প্রবণতা থাকে। দুর্গাপুরের দিন গোসল করে পরিষ্কার জামা কাপড় পড়াতে হবে। ঘেমে গেলে দ্রুত শিশুর শরীর মুছে দিয়ে কাপড় বদলাতে হবে। যেসব স্থানে ঘামাচি হচ্ছে সব জায়গায় শিশুদের উপযোগী পাউডার ব্যবহার করতে হবে। পাউডার লাগানোর আগে এদের শরীল ভালো করে মুছে নিতে হবে তারপর পাউডার লাগালে ভালো উপকার পাওয়া যাবে। 

গরমের সময় শিশুদের বেশি সময় ধরে গ্রা পার্ক করানো উচিত নয়। বেশিক্ষণ এই গরমে ডাহা পার করে থাকলে শিশুর ত্বকে খুশ করি দেখা দিতে পারে। তাই খেয়াল রাখতে হবে যে ভিসা পাওয়ার জন্য শিশুদের বেশিক্ষণ পরিয়ে রাখা না হয়। একটি ডায়পার্ক নষ্ট হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তা খুলে অন্য একটা ডায়াপার করাতে হবে।

গরমে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

প্রচন্ড গরমে ইসরা হিট স্ট্রোক হয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারে। এ ধরনের সমস্যা হলে বা তীব্র পারি শূন্য তাহলে শিশুদের অবশ্যই বাতাসের নিচে রাখতে হবে এবং মাথায় পানি ঢালতে হবে এবং সারা শরীর পাতলা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে। এতে যদি শিশুর জ্ঞান না ফেলে তাহলে অবশ্যই তাড়াতাড়ি করে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

শিশুর যত্ন

গরমে শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে এবং ধুলাবালি থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে। আপনি যদি বাহিরে বের হন যদি আপনার শিষ সন্তান সাথে থাকে তাহলে অবশ্যই বিশুদ্ধ খাবার এবং পানি সব সময় সঙ্গে রাখবেন। যদি ভেবে যায় তাহলে অবশ্যই মুছে দিতে হবে ঘাম শুকিয়ে গেলে শিশু ঠান্ডা লাগতে পারে। সব সময় শিশুকে শব্দ তৈরি খাবার এবং তাজা ফলমূল খেতে দিতে হবে।

* গরমে শিশুকে প্রচুর পানি খাওয়াতে হবে যেন প্রসাবের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে। গরমে বিভিন্ন রকমের পোকামাকড় মশা মাছিকি প্রাত-ত্যাদির ওপর বেড়ে যায়। এগুলোর জন্য শিশুর অসুস্থতা কারণ হতে পারে। তাই ঘরকে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে যেন পোকামাকড় ঘরে আসতে না পারে।

* গরমের সময় প্রচুর মৌসুমী ফল আমাদের দেশে পাওয়া যায় এসব মৌসুমী ফল আপনার দিন এবং জোস করেও দিতে পারেন। এতে আপনার শিশুর ভিটামিনের চাহিদা মিটবে ও শিশুর পুষ্টি পূরণ হবে এবং সে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে।

লেখকের মন্তব্য

আপনি সবসময় মনে রাখবেন শিশুদের যত্ন একটু বেশি নিতে হয়। এই গরমে বাচ্চাদের কে নিয়ে দূরে কোথাও ভ্রমণ না করাই ভালো। হিসাব নিয়ম কানুন মেনে চললে আশা করি আপনার ছোট বাচ্চারা সুস্থ সবল থাকবে। আশা করি আপনারা এই আর্টিকেলটি করে খুব উপকৃত হয়েছেন। যদি আরো কিছু জানতে চান তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট বক্সে মাধ্যমে জানাবেন। এই আর্টিকেলটা যদি আপনাদের ভালো লাগে তবে অবশ্যই একটা লাইক দিবেন এবং অন্যান্যরাও যেন জানতে পারে সেজন্য আপনাদের বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url