আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং পুষ্টিগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠক, আমার ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। আপেলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। আমাদের সকলের কাছেই পরিচিত একটি ফল আপেল। আপেল এর ইংরেজি নাম হল অ্যাপল ( Apple) । ছোট বড় সবাই এই ফলটি খেতে খুব পছন্দ করে। আপেল বেশ উপকারিতা আছে এবং এর কিছু অপকারিতা আছে।
এই ফলটি আমরা সবাই খেলেও এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানিনা। এই ফলটিতে উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ এর সংখ্যা অনেক বেশি। এই ফলটিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি। এছাড়াও আপেলে আছে ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, মিনারেল ,পটাশিয়াম। যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
ভূমিকা
আমরা ছোট বড় সবাই আপেল খেতে বেশ পছন্দ করে থাকি। তবে এই আপেলর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা নাই। তাই আপনাদের আজকের এই আর্টিকেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। আপনারা যদি এ বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে অবশ্যই ধৈর্য সহকারে এই আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন। তাহলেই এ সম্পর্কে আপনারা বুঝতে পারবেন। তাই আর দেরি না করে আপনারা এই আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়তে থাকুন এবং এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
আপেলের পুষ্টিগুণ
আপেল একটা পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ফল। এই ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ, ফাইবার ,ভিটামিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে। একটি মাঝারি আকারের আপেলে কি কি পুষ্টি উপাদান আছে তা বিস্তারিত জেনে নেই।
* ক্যালোরি ৯৪ কিলো ক্যালরি
* ফাইবার ৪ গ্রাম
* শর্করা ১৩.৮০ গ্রাম
* খাদ্য আশ ২.৫ গ্রাম
* চিনি ১০.৪০ গ্রাম
* আমিষ ০.২৬ গ্রাম
* প্রোটিন ০.০৬ গ্রাম
* পটাশিয়াম ১৯৫ মিলিগ্রাম
* ম্যাগনেসিয়াম ৮ মিলিগ্রাম
* ফোলেট ৪ মাইক্রগ্রাম
* ভিটামিন সি ১০ মিলিগ্রাম
* ভিটামিন কে ৬ মাইক্রগ্রাম
* কার্বোহাইডেট ২৪ গ্রাম
* কবার ০. ২ মিলিগ্রাম
এছাড়াও আপেলে যে ভিটামিন ও খনিজ থাকে তা আমাদের শরীরের জন্য খুব কার্যকারী।
আপেল খাওয়ার উপকারিতা
প্রতিদিন নিয়মিত আপেল খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় , তাহলে চলুন নিচের আলোচনা থেকে জেনে নেই।
ওজন নিয়ন্ত্রণে
স্ন্যাকস বা নাস্তা হিসেবে এমন কিছু খাওয়া যায় যা আপনার শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করবে তাহলে তো আপনার সোনায় সোহাগা। ঠিক সেই কাজটি করে থাকে আপেল। এই ফলটিতে আছে পানি এবং ভোজ্য আঁশ, যা আপনার পেট কে ভরা রাখতে সহায়তা করে। যদি আপনি খাবার খাওয়ার আগে কয়েক টুকরা আপেল খান তাহলে আপনার পেট অল্পতেই ভরে যাবে। এর ফলে আপনার প্রায় দুইশ ক্যালোরি পর্যন্ত কোন খাবার গ্রহণ করতে পারবেন। এতে আপনার ওজন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চ এর এড গবেষণায় জানা গেছে যে, আপেল খেলে শরীরে অগ্নাশয়ের ক্যান্সারের সম্ভাবনা প্রায় 24 শতাংশ কমে যায়। কারণ আপেলের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফ্লাভোনল থাকে, যা অগ্নাশয়কে সুরক্ষা দেয় আপেলে আরো থাকে ফাইবার যা আপনার মলদ্বারের ক্যান্সার রোধে সহায়তা করে।
কোলেস্টরেল কমাতে
আপেলের ভিতরে যে ফাইবার উপাদান থাকে, তা আপনার শরীরে অন্ত্রের ফ্যাট কমাতে সহায়তা করে। এর ফলে আপনার শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক থাকে। এজন্য আপনার শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে থাকে যা আপনার শরীরের হার্টের ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে। আবার আপেলের খোসাতে ফেনলিক থাকে, যা আপনার শরীরের রক্তনালীর কোলেস্টেরল সরাতে সহায়তা করে। এর জন্য তার শরীরে হাড়ের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে
আপেল ফলটিতে আছে ফাইবার যা আপনার শরীরের হৃদরোগের কমাতে সহায়তা করে। যদি আপনি প্রত্যেকদিন 100 গ্রাম বা এর বেশি আপেল খান তাহলে আপনার শরীরের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে। এই ফলটি আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে হাতেলে আছে ভিটামিন সি যা আপনার শরীরের আরো প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে ফলে আপনার আটকেও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আপনারা যদি প্রত্যেকদিন নিয়মিত আপেল খান তাহলে অনেক উপকার পাবেন।
হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
এই ফলটিতে পুষ্টীয় প্রধান পশুর পরিমাণে থাকে যা আপনার শরীরের হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। এই ফলটিতে আছে পটাশিয়াম, কপার, জিংক, আয়রন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি যা আপনার শরীরের হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। তাই আপনার শরীরের হার কে শক্ত ও মজবুত রাখতে চান তাহলে আপনি প্রতিদিন আপেল খাবেন।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে
আপনি যদি প্রত্যেকদিন আপেল খাওয়ার অভ্যাস করেন তাহলে ডায়াবেটিসের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন। প্রত্যেকদিন টাকার আপেল খা এতে আপনার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি প্রায় 30% কমে যাবে।
দাঁত সাদা করে
আপেল খেলে আপনার দাঁতের হলদে ভাব দূর করতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। যখন আপনি আপেল খান বা দাঁত দিয়ে চিবান তখন দাঁতের ফাঁকে অনেক খাদ্য কনা ঢুকে থাকে এই ফল খাওয়ার ফলে আমার দাঁতের উপরে হলদেতে ভাব পরিষ্কার করে বল দাঁতও অনেক সুন্দর হয়।
হাঁপানি কমাতে
হাঁপানি কমাতে আপেলের জুরি নেই। আপনার হাঁপানি যদি বেশি হয়ে থাকে তাহলে নিয়মিত আপেল খাবেন এতে বেশ উপকার পাবেন। অনেক গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, যেসব ব্যক্তি প্রতিদিন অন্তত একটি করে আপেল খায় তাদের হাঁপানি তীব্রতা অনেকাংশে কমে যায়।
পাকস্থলীর সমস্যা সমাধানে
পাকস্থলের সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন। এই সমস্যা যদি কারো থাকে তাহলে আপনারা শান্তি মত খেতে পারেন না ঘুমাতে পারেন না এমনকি ঠিকমতো কাজকর্ম করতে পারেন না অনেক সময় দেখা যায় যে পেট খারাপ হয়ে যায় পেটে ব্যথা হয় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দেখা যায়। এজন্য আপনি যদি নিয়মিত আপেল খান তাহলে আপনাদের এই সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যায়। কারণ আপেলে আছে পেকটিন নামক উপাদান যা আপনার হজম ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে
আপেলে আছে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার ত্বকের সজীবতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও এই ফলটিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এই ভিটামিন সি আপনার ত্বকের কালো দাগ, ব্রণ দূর করতে সহায়তা করে। এ ছাড়াও যদি আপনি চান তাহলে দুধ ও মধুর সাথে আপেলের পেস্ট তৈরি করে মুখে ব্যবহার করতে পারেন। এই মিশ্রিত পেস্ট মুখে ব্যবহার করলে আপনার মুখ ফর্সা হওয়ার পাশাপাশি অনেকটা উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
আপেলের অপোকারিতা
আপেল একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ফল যা আপনার শরীরের সুস্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। তবে এর কিছু অপকারিতাও আছে।
* এই ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে ভাইবার থাকার জন্য আপনার শরীরের হজমের জন্য খুব ভালো। তবে অতিরিক্ত এই ফলটি খেলে আপনার পেট ফাঁপা গ্যাস এমনকি ডায়রিয়া হতে পারে।
* কিছু কিছু লোক আছে যাদের আপেলে এলার্জি হয়। বেশি পরিমাণে এই ফলটি খেলে আপনার এলার্জির লক্ষণ দেখা যেতে পারে যেমন ফোলা ভাব, চুলকানি, লাল ভাব ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
* আপেলের বীজ একটু বিষাক্ত ধরনের হয়। আপেল খাওয়ার সাথে যদি আপেলের বিষ খেয়ে ফেলেন তাহলে আপনার শরীরের বিষক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে
* যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে তাদেরকে অতিরিক্ত পরিমাণে আপেল খাওয়া উচিত নয় কারণ এই ফলটিতে কার্বোহাইড্রেট রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।
* আপেল ফলটিতে অনেক পরিমাণে কীটনাশক দেওয়া হয়। আমরা সবাই জানি আমাদের শরীরের জন্য কীটনাশক কতটা ক্ষতিকর। আপনারা যত বেশি আপেল খাবেন তত আপনার শরীরে কীটনাশকের প্রবেশ করবে। এজন্য আপনারা অভিযুক্ত পরিমাণে আপেল খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে
আপেল খাওয়ার সঠিক সময়
প্রত্যেকটি ফল খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে যা ওই সময় খেলে আপনার শরীরে ভালো উপকার পাওয়া যায়। আমরা অনেকেই এই ফলটি খাই তবে এই ফলটি খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে অনেকেই জানিনা। আপেল খাওয়ার সঠিক সময় হচ্ছে সকালের ব্রেকফাস্টে। সকালবেলা আমাদের পেট যখন খালি থাকে তখন আমাদের শরীরে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পুষ্টির প্রয়োজন হয় যা আমাদের সারাদিনের এনার্জির কাজ করে। তাই প্রত্যেকদিন সকালবেলা ব্রেকফাস্টে যদি আপেল খান তাহলে আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে থাকে এবং শরীরের রক্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বৃদ্ধি পাবে।
* প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নাস্তা হিসেবে আপেল খাওয়া বেশ উপকারী। সকালবেলা খালি পেটে এটি খেলে আপনাদের শরীরে অনেক শক্তি আসে এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে পেট ভরা থাকে।
* দুপুরবেলা যখন খাবার খাবেন তার কিছুক্ষণ আগে আপেল খেলে আপনার রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকবে এবং অতিরিক্ত খাওয়া থেকেও বিরত থাকা যায়
* বিকাল বেলা নাস্তা হিসেবে আপনি আপেল খেতে পারেন এতে আপনার শরীর বেশ উৎফুল্ল থাকবে ও মন অনেক ভালো থাকবে।
আপেল খেলে কি গ্যাস হয়
আপনাদের অনেকেরই মনে প্রশ্ন আসে যে আপেল খেলে গ্যাস হতে পারে। তবে আপনারা যদি স্বাভাবিক মাত্রায় আপেল খান তাহলে আপনার শরীরের ক্ষতি হবার কোন সম্ভাবনা নেই তবে অতিরিক্ত পরিমাণে এই ফলটি খেলে আপনার শরীরের গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। প্রতি ১০০গ্রাম আসলে ১১. ২৯ গ্রাম প্রাকৃতিক চিনি আছে যা আপনার শরীরের বদ হজমসহ গ্যাস্টিকের সমস্যা কারণ হতে পারে। তাই আপনারা স্বাভাবিক মাত্রায় আপেল খেলে আপনার শরীরের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন এবং অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন। স্বাভাবিক মাত্রায় খেলে আপনার শারীরিক কোন সমস্যা হবে না।
আপেল খেলে কি ওজন বাড়ে
আপনাদের অনেকেরই মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে আপেল খেলে হয়তো ওজন বাড়ে কিন্তু এর উত্তরটা হচ্ছে আপেল খেলে ওজন বাড়ে না তাই আপনারা আপনাদের প্রত্যেকদিনের খাদ্য তালিকায় আপেল রাখতে পারেন। প্রত্যেকদিন সকালে যদি একটি করে আপেল খান তাহলে আপনার শরীরে বাড়তি ওজন কমাতে বেশ উপকারে আসবে। তাছাড়াও এই ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে ভাইবার থাকে বলে এটি খেলে বেশি সময় ধরে পেট ভরা থাকে। এতে আপনার শরীরের অতিরিক্ত খাবার খাবার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যাবে। এজন্য আপনার শরীরের ওজন আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণে আসবে ।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আশা করি আপনারা এই আর্টিকেলটি পড়ে আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং এর পুষ্টিগণ আগুন সম্পর্কে একটি ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি। আশা করি এই আর্টিকেলটি করে আপনারা খুব উপকৃত হয়েছেন। অবশ্যই আর্টিকেলটি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এই আর্টিকেলটি যদি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করেন তাহলে তারাও এ সম্পর্কে জানতে পারবে।
প্রতিনিয়ত আরো আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। যদি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে কোন মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ সবাইকে
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url