Post Page After Menubar Ad

গাজর খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন



প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম,আপনারা কেমন আছেন, আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজ আপনাদের সামনে নতুন একটি আর্টিকেল নিয়ে হাজির হয়েছি, সেটা হল গাজর। গাজর খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানেন কিন্তু যারা জানেন না তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি। আশা করি মনোযোগ সহকারে এই আর্টিকেলটি পড়লে এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাবেন।
গাজর আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এমন কি ঠান্ডা কাশি সর্দি থেকেও অনেকটা সুরক্ষা দেয়। গাজর আমাদের শরীরের ক্যান্সারের মতো শক্তিশালী রোগের বিরুদ্ধেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

ভূমিকা

গাজর দুই টাকার একটি ভালো উৎস, যা আমাদের শরীরের ভিটামিন এ এর অভাব পূরণ করে। যদি আপনি এটা বেশি পরিমাণে খান তাহলে আপনার শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। গাজরে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে, তাই যারা ডায়াবেটিস রোগে ভুগে থাকেন তাদের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গাজর খাবেন। গাজরের কিছু পুষ্টিগুণ আছে। গাজরের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে আজকের এই আর্টিকেলে।

গাজরের পুষ্টিগুণ

শীতকালীন সবজি গাজর হলেও এখন আমাদের দেশে সারা বছরই এটা পাওয়া যায়। এটা খেতে খুব সুস্বাদু আবার তেমনি এটাতে আছে কিছু নানা পুষ্টিগুণ। এর ভিতর অনেক পুষ্টি উপাদান আছে বলেই পুষ্টিবিদ রায়কে সুপার ফুড হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। পুষ্টিগুণে ভরা গাজর দেখতে খুব আকর্ষণীয় এবং সুন্দর হওয়ার পিছনে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন নামক একটি উপাদান।

এছাড়াও গাজরে আছে খাদ্য শক্তি বিভিন্ন খনিজ পদার্থ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, লৌহ ইত্যাদি। আরো আছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যেমন থায়ামিন বি১, রিবোফ্লাবিন বি ২, নায়াসিন বি৩, ভিটামিন বি ৬ ,ফোলেট বি ৯ ,ভিটামিন সি, ভিটামিন ই ইত্যাদি। গাজরে পুষ্টি উপাদান বেশি থাকার কারণেই পুষ্টিবিদরা নিয়মিত গাজর খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন

গাজরের উপকারিতা

প্রত্যেকটা মানুষই সব সময় নিজেকে সুস্থ রাখতে চায়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজি পাওয়া যায় তার মধ্যে গাজরকে স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপযোগী বলে মনে করা হয়। অধিকাংশ মানুষই গাজরের প্রাকৃতিক মিষ্টি ও সুস্বাদু সাত কে বেশি পছন্দ করে থাকেন। গাজর খেতে বেশ মজা ও এর রয়েছে অনেক উপকারিতা। তবে এর কিছু উপকারিতা আছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক গাজরের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

গাজর চোখ ভালো রাখে

আমাদের শরীরের জন্য চোখ একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এসব ছাড়া পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য আমাদের কাছে অন্ধকার মনে হয়। সুতরাং আমাদের চোখের যত্ন নেওয়া খুব জরুরী। আমরা যদি প্রতিদিন একটা করে গাজর খাই তাহলে আমাদের চোখ ভালো রাখতে অনেকটা সাহায্য করে। ভিটামিন এ আমাদের চোখের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। গাজরে আরো আছে বিটা ক্যারোটিন। এই বিটা কারো টিল নিজেই ভিটামিন এতে রূপান্তরিত হয়।

প্রতিবছর আমাদের দেশে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার শিশু ভিটামিন এ এর অভাবে অন্ধ হয়ে যায়। এসব শিশুদের বয়স সাধারণত আপনার সাথে পাঁচ বছর পর্যন্ত। আবার আমাদের দেশে প্রায় প্রতিবছর পাঁচ লাখের মতো শিশুর রাতকানা রোগে আক্রান্ত হয়। যদি আমরা এসব শিশুদের সলিড খাবার দেওয়া শুরু থেকেই ক্যারোটিনের রাজা তাদেরকে তাদের খাবার তালিকায় রাখি তাহলে অনেক কিছুই এই অন্ধত্ব থেকে রেহাই পাবে। তাই আপনার শিশুকে প্রত্যেকদিন গাজর খাওয়ার অভ্যাস করান। কেবল শিশুরাই খাবে তা না বড়রাও প্রত্যেকদিনের খাবার তালিকায় গাজর রাখুন। 

হার্ট ভালো রাখে

আমাদের শরীরের অঙ্গ গুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হল হৃদপিণ্ড। এটি যখন সুস্থ থাকে তখন আমরা শারীরিকভাবে কর্মক্ষম থাকি। প্রতিদিন মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকি এবং পর্যাপ্ত ঘুমাই। আমরা অনিয়মিত জীবনযাপনের জন্য হার্টের উপর চর্বি বা কিছু আস্তরণ পড়ে ফলে এটি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায়। গাজরে আছে ফাইবার এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ধমনীর চরবির উপর কোন কিছুর আস্তরণ জমতে না দিয়ে আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক একটা সাহায্য করে এবং আমাদের হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

মেদ ও অতিরিক্ত ওজন কমায়

আমরা অস্বাস্থ্যকর বা ভেজাল খাওয়ার জন্য শরীরের অতিরিক্ত চর্বি জমে এবং শরীরের ওজন বেড়ে যায়। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর। অনেক সময় দেখা যায় মানুষ চর্বি ও মেদ কমানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। অনেক টাকা পয়সা খরচ করেও ডাক্তারের চিকিৎসা করেও এই চর্বি কমাতে পারেন না। কিন্তু গাজন নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরের চর্বি অনেকটা কমে যায়।

কারণ গাজরে ফ্যাট থাকে না ও গাজরে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম হলে গাজর খেলে পেট ভরবে কিন্তু ওজন বাড়বে না। এজন্য পুষ্টিবিদরা নিয়মিত গাজর খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। গাজর ওজন কমায় এই বলে যাদের স্বাস্থ্য একটু চিকন তারা গাজো খেতে পারবে না তা কিন্তু নয়। গাজরে আছে মাল্টিভিটামিন বা পুষ্টি থাকার জন্য এটি সবার জন্য উপকারী।

চুল ও ত্বক ভালো রাখে

চুলও পাকের জন্য বেশ উপকারী একটা সবজি গাজর। এটাতে আছে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিস উপাদান যা আমাদের চুল মজবুত করতে সাহায্য করে ও ত্বককে সুস্থ ও সতেজ রাখে। এছাড়াও গাজরের পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের ত্বক শুকিয়ে যাওয়ার উত্তরে ও রক্তের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বককে রোদে পোড়ার হাত থেকে অনেকটা রক্ষা করে।

গাজর আমাদের শরীরের জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে, আমাদের শরীরে ক্ষত বা ইনফেকশন হওয়া থেকে রক্ষা করে, রক্তশূন্যতা কমায় কিডনি ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে শিশুর বুদ্ধি বিকাশে সহায়তা করে এবং অল্প বয়সে বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে থাকে।

লিভার সুস্থ রাখে

আপনি যদি নিয়মিত কাদের খান তাহলে আপনাদের লিভার সুস্থ থাকবে। গাজরে আছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যা আমাদের লিভার এ গিয়ে আমাদের দেওয়া হতে বিভিন্ন ক্ষতিকর টক্সিন পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। সেই সাথে গাজরে ফাইবার থাকায় আমাদের কোলন পরিষ্কার থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা করে।

গাজরের বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে জানলেন। তবে এর কিছু অপকারিতা আছে। গাজর আমাদের শরীরে যে পরিমাণ প্রয়োজন তার চেয়ে যদি অতিরিক্ত গ্রহণ করেন তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। অতিরিক্ত গাজর খেলে কিছু সমস্যা বয়ে আনতে পারে। এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক এর অপকারিতা সম্পর্কে।

গাজরের অপকারিতা

* গাজর খেলে আমাদের টক উজ্জ্বল হয়। তবে বেশি পরিমাণে খেলে আমাদের ত্বকের রংয়ের পরিবর্তন হতে পারে। বিশেষ করে ত্বকের রং হলদে হতে পারে।

* শিশুদের জন্য গাজর খাওয়া বেশ উপকারী। তবে বেশি পরিমাণে খেলে শিশুদের দাঁত ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে।

* সাধারণত গরমের সময় আমরা সালাত একটু বেশি পরিমাণে খাই। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে গাজর খেলে আমাদের উচ্চ রক্তচাপ ও ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

* যে সমস্ত মহিলারা বা মায়েরা বাচ্চাদের বুকের দুধ পান করান, সে সমস্ত মায়েরা যদি অতিরিক্ত গাজর খান তাহলে দুধের স্বাদ পরিবর্তন ঘটতে পারে। এজন্য অনেক সময় বাচ্চারা দুধ খাওয়ার প্রতি অনীহা দেখা দিতে পারে।

* এছাড়াও যদি অধিক পরিমাণে গাজর খান তাহলে ডায়রিয়া, বদহজম , বমি সহ পাকস্থলীর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় অতিরিক্ত গাজর খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। গাজরের উপকারিতা যদি কাজে লাগাতে চান তাহলে প্রত্যেকদিন পরিমাণ মতো গাজর খেতে হবে। যদি কোন জটিল রোগে আপনি ভুগে থাকেন তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক গাজর খেতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

এই ছিল গাজরের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত ‌। আজকের আর্টিকেলটি এই পর্যন্ত। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে বেশ উপকৃত হয়েছেন। এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন। আর যদি কোন জিজ্ঞাসা থাকে তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url