গর্ভাবস্থায় কি কি খাবেন এবং কতটা খাবেন এ সম্পর্কে জেনে রাখুন
গর্ভকালীন সময়ে কি কি খাবেন এ সম্পর্কে আজ বিস্তারিত আলোচনা করব। কতটা খাবার খাবেন এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। গর্ভকালীন সময়ে শারীরিক অবস্থায় কোন কোন খাবার খাওয়া যাবে এবং কোন কোন খাবার খাওয়া যাবেনা, কোন কোন খাবার বেশি পরিমাণে খেতে হবে এবং কোনটা কম খেতে হবে, আজকের এই আর্টিকেলটি একটি মনোযোগ সহকারে পড়লে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
অনেক সময় আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষীদের বিভিন্ন রকম উপদেশ দিয়ে থাকেন। কোনটা শুনবো, কোনটা মানবো, এ নিয়ে থাকে হরেক রকমের দ্বিধাদ্বন্দ। এ সমস্ত দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে একজন গর্ভস্থার নারীর কি কি পুষ্টির প্রয়োজন এবং তা কতটা কি পরিমান, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এর চারটি আপনাকে সঠিক খাবার বেছে নিতে সাহায্য করবে।
ভূমিকা
গর্ভকালীন সময়ে সঠিক খাদ্য তালিকা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। আপনার গর্বের শিশুটি যাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় সেদিকে আপনার নিশ্চিত হতে হবে। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে কিন্তু মাকে। মা যদি পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে তাহলে তার গর্ভের সন্তান এমনিতেই পুষ্টি পাবে। গর্ভকালীন সময়ে মায়ের পশুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম খেতে হবে, আয়রন খেতে হবে, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি এবং শাক সবজি ও ফলমূল প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। নিম্নে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে।
গর্ভাবস্থায় প্রোটিন এর পরিমাণ
একজন নারী যখন গর্ভবতী হন তখন তার প্রোটিনের চাহিদা বৃদ্ধি পায় প্রায় ১/৩ ভাগ। স্বাভাবিক অবস্থায় আপনাদের শরীরে যে পরিমাণ প্রোটিনের দরকার প্রয়োজন হয়, গর্ভাবস্থায় তা অনেকটা বেড়ে যায়। সে হিসাবে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আরো অতিরিক্ত ১৪ গ্রাম প্রোটিন থাকতে হবে। সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
খাওয়াবিক অবস্থায় খাদ্য তালিকায় আপনার যেসব খাবার ছিল সেগুলোর সঙ্গে অতিরিক্ত আরো একটি ডিম, শিমের দানা, কিছু বাদাম এবং একবাটি দান গর্ভকালীন সময়ে এসব খাবার আপনার শরীরের অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে সক্ষম। একটি ডিম থেকে প্রায় সাত থেকে আট গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। বাদাম থেকে প্রায় আট গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। ডাল ও সিমের দানা থেকে প্রায় ১৪ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।
ক্যালসিয়াম
স্বাভাবিক অবস্থায় আপনার যেটুকু ক্যালসিয়াম এর প্রয়োজন, গর্ভকালীন সময়ে এর প্রয়োজন প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম এর মত বেড়ে যায়। আপনার পেটের বাচ্চার বৃদ্ধি, নিজের শরীরের জন্য, বুকের দুধ তৈরি হওয়ার জন্য ক্যালসিয়ামের খুব প্রয়োজন। দই, পনির, দুধ থেকে আমরা এই অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে পারি। তবে বেশিরভাগ শুটকি মাছ, চিংড়ি মাছ এগুলোতে ক্যালসিয়াম থাকে গর্ভকালীন সময়ে আপনার শরীরের চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
ভিটামিন বি ১ ও বি ২
ভিটামিন বি পরিবারভুক্ত কয়েকটি ভিটামিনের মধ্যে গর্ভকালীন সময়ে এর চাহিদা বেড়ে যায়। ভিটামিন বি আপনার ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে চালু করে রাখে। আপনার শরীরে ক্লান্তি কমাতে অনেকটা সাহায্য করে এবং পাশাপাশি আপনার শরীরের চামড়ার শুষ্কভাব কমিয়ে শতশ রাখতে সাহায্য করে। গর্ভকালীন সময়ে আপনার হরমোনের কারণে কিছুটা পরিবর্তন ঘটে।
এ কারণে পেট কোমর গলা এসব জায়গায় চামড়ার অনেকটা পরিবর্তন হয়। এসবের কারণে ভিটামিন বি এই সমস্ত চামড়ার দেখো ভালো করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কলিজা, কলা, ডিম, লাল মাংস, কাঠবাদাম, পালং শাক ও দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি পাওয়া যায়।
আয়রন
গর্ভকালীন সময়ে শিশু তার মায়ের কাছ থেকে আয়রন পেয়ে থাকে। জন্মের পর যেহেতু শিশু কেবল তার মায়ের দুধ খায়, মায়ের দুধে সাধারণত আয়রন থাকে না। এই ৬ মাস শিশু তার নিজের শরীরে জন্মের আগেই আয়রন জমা করে রাখে তার মায়ের শরীর থেকে। গর্ভাবস্থায় যদি মায়ের শরীরে আয়রনের ঘাটতি হয় তখন কিন্তু শিশু আয়রন জমা রাখতে পারেনা।
এজন্য জন্মের পর পরই শিশুরা রক্তস্বল্পতায় ভোগে। এজন্য গর্ভকালীন সময়ে মায়েদেরকে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খুব জরুরী। আয়রনের জন্য সবচেয়ে ভালো লাল মাংস। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায় কচু শাকে। অনেক ফল আছে এর মধ্যেও বেশি পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায় যেমন পাকা তেতুল ও কাঁচা আম। এছাড়াও শুটকি মাসেও প্রচুর পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায়। ফুলকপি আগা সহ খেলেও মায়েদের আয়রনের চাহিদা অনেকটা পূরণ হয়।
ভিটামিন সি
গর্ভকালীন সময়ে আয়রন শোষিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন ভিটামিন সি। এজন্য ডাক্তাররা বা পুষ্টিবিদরা আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরপরই আমলকি, বাতাবি লেবু, কমলা ও লেবু খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে গর্ভকালীন সময়ে বাচ্চার মানসিক বৃদ্ধিতে ভিটামিন সি এর গুরুত্ব অপরিসীম। ভিটামিন সি ফলিক এসিডকে কার্যকর করে তোলে। গর্ভকালীন সময়ে শিশুর হাড় গঠনে ও মাংসপেশি গঠনে প্রোটিনের প্রয়োজন পড়ে। ভিটামিন সি কোলাজেন তৈরিতেও অনেকটা সাহায্য করে থাকে।
ভিটামিন ডি
গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের শরীরের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম। গর্বের শিশুদের দাঁত ও হাত তৈরিতে সাহায্য করে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। সেজন্য গর্ভকালীন সময়ে দুধ,, ডিম , দই, পনির ও ছোট মাছ বেশি বেশি পরিমাণে খাওয়া দরকার।
ফলিক অ্যাসিড
গর্ভাবস্থায় মায়েদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে শীতের প্রয়োজন হয়। খালি কে সিড সাধারণত বেশি পাওয়া যায় ডাল ও পালন শাকে। এছাড়াও ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, কমলা এসব জিনিসে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড পাওয়া যায়। গর্ভাবস্থায় মায়েদের শরীরে পুষ্টির উপাদানের প্রয়োজনে তা অনেকটা বেড়ে যায়। কোন কোন সময় মিনারেল ও ভিটামিনের চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে পড়ে।
অনেক সময় গর্ভাবস্থায় সব ধরনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে চাইলে সব ধরনের পুষ্টি কিন্তু পাওয়া সম্ভব হয় না। এজন্য গর্ভাবস্থায় এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো বেছে নিলে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল ও ভিটামিন পাওয়া যায়। এতে করে আপনি যদি পরিমাণে কমও খান তাহলেও পুষ্টির চাহিদা অনেকটা পূরণ হবে।
শাকসবজি ও ফল
গর্ভাবস্থায় মায়েদের নানান ধরনের রঙিন ফল ও প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খেতে হবে। এসব শাকসবজি ও ফলে গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের শরীরে ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদা পূরণ করে থাকে। শাকসবজি ও রঙিন ফলে থাকে ক্যারোটিন যা শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে ওঠায় অনেকটা সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও শাকসবজি ও ফলে আজ জাতীয় খাবারের প্রধান উৎস এসব খাবার হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অনেকটা প্রতিরোধ গড়ে তুলে।
শাকসবজি ও ফলমূল রান্না করে কিংবা কাঁচা যে কোন উপায়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে এগুলো খাওয়ার আগে অবশ্যই পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের খেতে পারেন যেমন গাজর, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, পালং শাক, মটরশুটি এবং কলা, আম, কমলা, জাম্বুরা, মালটা, ইত্যাদি খেতে পারেন।
মাছ
গর্ভকালীন সময়ে আপনাকে সাপ্তাহে প্রায় ২৮০ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম মাছ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে বড় মাছের ছয় টুকরা এবং দেড় থেকে দুই বাটি ছোট মাছের তরকারি মোটামুটি খেতে পারেন। তবে এই পরিমাণ মাসে অর্ধেক খাবেন তৈলাক্ত মাছ। কারণ এই তৈলাক্ত মাছ থেকে আপনি গুরুত্বপূর্ণ ওমেগা তিন ফ্যাটি এসিড পাবেন।
গর্ভাবস্থায় শিশুর সময়ের আগে জন্ম হয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রতিরোধ করে তৈলাক্তমাছ বা অমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড। এতে করে শিশু মৃত্যুর হার অনেকটা মিয়ানা সম্ভব হয়। গর্ভাবস্থায় যেসব মাছ খেতে পারেন তা হল- পুটি মাছ, বাটা মাছ, ইলিশ মাছ ,বাঁশ পাতা মাছ ,শৈল মাছ, চাপিলা মাছ ইত্যাদি। প্রতি সপ্তাহে আপনি ২৫০ থেকে ২৮০ গ্রাম এর বেশি তৈলাক্ত মাছ খাবেন না।
লেখকের মন্তব্য
গর্ভকালীন সময়ে কি কি খাবেন এবং কতটা খাবেন এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি আপনারা এই আর্টিকেল কি করে উপকৃত হয়েছেন। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে আপনারা আপনার বন্ধুরা যাতে জানতে পারে এজন্য তাদের মাঝে আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন। আর যদি কোন কিছু জানার থাকে আমাদেরকে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url