শিশুদের কৃমির ওষুধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে রাখুন
যে সকল শিশুরা খালি পায়ে টয়লেট বা পায়খানা ব্যবহার করে এবং মাঠ ঘাটে খালিপায়ে ঘুরে বেড়ায়, তাদের পায়ের তলা দিয়ে বক্র কৃমি শরীরে প্রবেশ করা সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। এসব বক্রকৃমি শিশুদের শরীরে ঢুকে রক্ত চুষে খায়। এজন্য শিশুরা রক্তস্বল্পতায় ভোগে। এতে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে।
শিশুদের পায়খানার ।রাস্তায় এক ধরনের কৃমি দেখা যায় যেটার নাম সুচ কৃমি। এটা দেখতে একেবারে কেঁচোর মত। শিশুদের পেটে সাধারণত যেসব কৃমি হয় সেগুলো আকারে অনেকটা ছোট। আকারে এসব কৃমি ছোট হলেও শিশুদের শরীর থেকে প্রতিদিন শূন্য দশমিক দুই মিলি লিটার রক্ত শোষণ করে থাকে। সুতরাং আপনারা বুঝতেই পারছেন ছোট এই কৃমি শিশুদের শরীরের জন্য কতটা মারাত্মক।
আজকের আর্টিকেলে শিশুদের কৃমির ওষুধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
কৃমি কেন হয়
শিশুদের কৃমির ওষুধ খাওয়ার আগে আমাদেরকে কৃমি হওয়ার কারণ। সাধারণত কৃমি সংক্রমণের প্রধান কারণ হলো অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্নতা। সাধারণত অপরিষ্কার থেকেই বেশি কৃমির সংক্রমণ করে থাকে। এছাড়াও যে সকল কারণে শিশুদের কৃমি সংক্রমণ হতে পারে।
* ভিজা স্যাদ স্যাদে জায়গায় বা নোংরা স্থানে খালিপায়ে হাঁটাহাঁটি করা।
* অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করলে।
* অনিরাপদ পানি পান করলে।
* শাকসবজি ও ফলমূল না ধুয়ে খেলে।
* হাত না ধুয়ে খাবার খেলে।
* টয়লেট থেকে বের হয়ে সাবান দিয়ে হাত মুখ ভালো করে না ধুলে।
* সব সময় নোংরা জায়গায় খেলাধুলা করলে শিশুদের কৃমির সংক্রামণের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
কৃমির লক্ষণ
শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম জানার আগে কৃমির লক্ষণগুলো জানা দরকার আগে। যে সকল শিশুরা কৃমিতে আক্রান্ত হয় তাদের পেট খোলা খোলা থাকে এবং অপুষ্টিতে ভুগতে থাকে।
ঘরোয়া উপায়ে কৃমি দূর করা
শিশুদের কৃমির ওষুধ খাওয়ার সাথে কৃমির সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় ও সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। শিশুদের সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। শিশুর আজ সব জায়গায় চলাফেরা করে সেসব জায়গা বা বাসস্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি মেনে চললে শিশুদের কৃমির সংক্রাম্বনের হার কমে যাবে।
* খাওয়ার আগে অবশ্যই শিশুদেরকে সাবান দিয়ে দুই হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে বা অন্য কেউ খাইয়ে দেয় তাহলে তার দুই হাত ভালো করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
* শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার আগে অবশ্যই পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
* টয়লেট থেকে বের হয়ে দুই হাত অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে
* শিশুদের খালি পায়ে কখনোই টয়লেট ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না।
* অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কোন খাবার শিশুকে দেওয়া যাবে না।
* সব সময় ভিজা বা স্যাদ স্যাদে জায়গায় রাখা যাবে না।
* শিশুদেরকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এবং খেয়াল রাখতে হবে ময়লা হাত যেন শিশুর মুখে কোনভাবে না যায় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
* পরিবারের সবাইকে তিন মাস পর পর কৃমির ওষুধ সেবন করতে হবে এবং শিশুদের কৃমির ঔষধ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করাতে হবে।
কৃমির ওষুধ
অ্যালবেনডাজোল: যে সকল শিশুর বয়স দুই বছর এর বেশি সেসব শিশুদের এ্যালবেনডাজোল সিরাপ ১ডোজ ২ চামচ হারে সেবন করতে হবে। বাজারে এসব ঔষধ অ্যালবেন, সিনটেল নামে পাওয়া যায়।
মেবেনডাজল : সিরাপ বা ট্যাবলেট হিসেবে শিশুকে সেবন করতে দেওয়া যায়। বাজারে মেবেন বা এরমক্স ইত্যাদি নামে এই ওষুধগুলো পাওয়া যাবে। যেসব শিশুর বয়স দুই বছরের বেশি তাদেরকে এক চামচ করে দিনে দুইবার পরপর তিনদিন দিতে হয়।
লিভোমিসোল : এই ওষুধটা বাজারে কেটেক্মে নামে পাওয়া যায়। শিশুর ওজন হিসাবে এক কেজি ওজন হলে তিন মিলিগ্রাম যেমন শিশুর ওজন যদি পাঁচ কেজি হয় তাহলে 15 মিলিগ্রাম ওষুধ সেবন করাতে হবে। এই ওষুধটি ডোজ মাত্র একবার।
লেখকের মন্তব্য
আমরা যারা প্রাপ্তবয়স্ক আছি তারা সহজেই কৃমির লক্ষণ গুলো বুঝতে পারি কিন্তু শিশুরা কৃমির লক্ষণগুলো বুঝতেও পারে না বলতেও পারে না তাই তাদের একটু যত্ন নেওয়া উচিত। নিয়ম মেনে সঠিকভাবে শিশুদেরকে ওষুধ সেবন করাতে হবে। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। সবাইকে ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url