পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন



প্রিয় পাঠক ,আসসালামুয়ালাইকুম, আপনারা কেমন আছেন। আসছে ১৪ এপ্রিল বাঙালি জাতির ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখ। এই পহেলা বৈশাখের ইতিহাস সম্পর্কে অনেকেই জানেন। কিন্তু যারা এর ইতিহাস সম্পর্কে জানেন না তাদের জন্য এই আর্টিকেল। পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে আজ বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করব আশা করি আপনাদের খুব ভালো লাগবে। মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়লে এর ইতিহাস সম্পর্কে আপনারা জানতে পারবেন ।


প্রতিবছর ১৪ এপ্রিল বাংলাদেশ এই দিনটিকে বা পহেলা বৈশাখে উদযাপন করা হয়। আধুনিক বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা একাডেমি ১৪ই এপ্রিলকে পহেলা বৈশাখ হিসেবে প্রতিবছর এই দিনটি পালন করে থাকে ।

ভূমিকা

পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। অনেক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে প্রতিবছর এই দিনটি পালন করা হয়। সকল জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একসাথে বাংলা নববর্ষ পালন করে থাকে। আমাদের এই আর্টিকেলটি পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে, পহেলা বৈশাখ কে প্রথম চালু করেন এবং পহেলা বৈশাখ নিয়ে প্রতিবেদন বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করব।

পহেলা বৈশাখ

বাংলা সনের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। বাংলাদেশে নববর্ষ হিসাবে পালন করা হয় এই দিনটিকে। বাঙালি জাতির এই উৎসব একটি সর্বজনীন লোক উৎসব। আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে এই নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হয়। অতীতের ব্যর্থতা ও ভুল ত্রুটি র গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনার উদযাপিত হয় এই বাংলা নববর্ষ । 

এই দিনে সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। মুঘল সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সন প্রবর্তন করেন এবং তা কার্যকর হয়। তার সিংহাসন আহরণের সময় থেকে হিজরী চন্দ্রশন ও বাংলা সৌরসনকে ভিত্তি করে বাংলা সন প্রবর্তিত হয়। মূলত আকবরের সময় থেকেই বাংলা নববর্ষ পালনের সূচনা করা হয় ‌

সম্রাট আকবরের শাসনামলে চৈত্র মাসের শেষ দিন পর্যন্ত জমিদার তালুকদার এবং অন্যান্য ভুল স্বামীর খাজনা পরিশোধ করত বাংলার কৃষকেরা। তারপর দিন ভূ সামিরা তাদের মিষ্টিমুখ করাতেন নববর্ষ উপলক্ষে। এই দিনটি উপলক্ষে মেলা এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। নববর্ষের মূল আকর্ষণ ছিল হালখাতা। পুরোপুরি এটি একটি অর্থনৈতিক ব্যাপার ছিল।

গ্রামাঞ্চলে নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের শুরুতে তাদের পুরানো হিসাব নিকাশ সম্পূর্ণ করে নতুন বছরের খাতা খুলতেন। এ উপলক্ষে তারা নতুন পুরাতন খদ্দেরের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টিমুখ করাতেন এবং নতুন করে তাদের সাথে ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপন করতেন। সেই আকবরের সময় থেকেই এই অনুষ্ঠানটি পালিত হয়ে আসছে।

গ্রাম বাংলার নববর্ষের উৎসব

গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে কিভাবে জড়িত আছে নববর্ষের উৎসব। গ্রামের মানুষের কাছে এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। গ্রামের লোকজনেরা এই দিনটিতে ভালো খাওয়া ভালো থাকা এবং ভালো করতে পারা কে তাদের ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলজনক বলে মনে করেন। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে তখন ঘরে ঘরে বন্ধু-বান্ধব প্রতিবেশী আত্মীয় সজনদের আগমন ঘটে।

নানা রকম পিঠা পায়েশ মিষ্টি ইত্যাদি খাবার তৈরীর ধুম পড়ে যায়। একে অন্যের সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। নববর্ষ কে উৎসবমুখর করে তোলার জন্য আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলা। এটি একটি সার্বজনীন লোকজ মেলা। এসব মেলাতে স্থানীয় কারো পণ্য লোকশিল্প জাত পণ্য কুটির শিল্প জাত সামগ্রী কৃষিজাত দ্রব্য হস্তশিল্প সামগ্রী এসব মেলাতে পাওয়া যায়।

নববর্ষের সাথে পান্তা ইলিশ

পহেলা বৈশাখ মানেই লাল পাড়ের সাথে সাদা শাড়ি। আর ছেলেদের পাঞ্জাবি। আর একটা জিনিস সেটা হল বাঙালির ঐতিহ্য পান্তাইলিশ। পহেলা বৈশাখের সকাল বেলা পান্তা ইলিশ না হলে জমেই না। পহেলা বৈশাখের সাথে পান্তা ইলিশ কিভাবে এলো তা আজ আপনাদের জানাবো। বাংলা নববর্ষের সাথে পান্থালি সে সম্পর্ক শুরু হয়েছিল কিভাবে তার ইতিহাস জানা না গেলেও বাংলা সনের শুরুর ইতিহাস প্রায় সবাই জানে। 

সম্রাট শাহজাহান তৎকালীন সময়ে তাদের নিজেদের সুবিধার জন্য বাংলা বছর শুরু করেছিলেন। মুঘল শাসনামলে সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করত এসব আয়োজনে যেসব অতিথিরা আসতো তাদের ঐতিহ্যবাহী পান্তা ভাত খেতে দিত। তারপর থেকেই বিংশ শতাব্দীর শেষে বাঙ্গালীরা বাংলা নববর্ষ কে ঘটা করে উদযাপন করতে শুরু করেন।

মূলত তখন থেকেই পান্তা ইলিশের সূত্রপাত। বাঙালির বৈশাখের সঙ্গে সানতালি যুক্ত হয় মূলত ২১ শতাব্দীর শুরুতে। রোমান বাটমূল থেকে বাংলাদেশের শুরু হয় নববর্ষের সকালে পান্তা ইলিশ হওয়ার প্রচলন। তবে ১৯৮৩ সাল থেকে শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়।

পহেলা বৈশাখ উদযাপন

পহেলা বৈশাখ বাঙালিদের প্রাণের একটি উৎসব। এই দিনটিকে বরণ করে নিতে আমরা সবাই মুখ হয়ে থাকি। পহেলা বৈশাখ উদযাপন করার জন্য আমরা নিজেদের মতো প্রস্তুতি পরিকল্পনা নিয়ে থাকি। যারা অনেকেই আছেন বুঝতে পারেন না কিভাবে এই দিনটি উদযাপন করবেন তাদের জন্য এই নিচের আর্টিকেল। পহেলা বৈশাখের শুরুতে বা দিনের শুরুতে আমরা পান্তাইলিশ দিয়ে শুরু করব। বাংলা নববর্ষের প্রান্ত ইলিশ এটা আমাদের একটি বাঙালির ঐতিহ্যের প্রতীক।

রমনার বটমূল

পহেলা বৈশাখের মূল আকর্ষন হচ্ছে রমনার ভোট মূল্যের সারনাথের বিভিন্ন শিল্পীদের সংগীত পরিবেশন। এখানে অংশগ্রহণ করে আপনি পহেলা বৈশাখ টি উদযাপন করতে পারেন। এই দিনটিতে রমন্নার বটমূলের ছানা টে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকাল থেকেই শুরু হয় বর্ষবরণের বিভিন্ন মূল উৎসব।

পুরো অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয় কবিতা আবৃত্তি সংগীত পরিবেশনা একক সংগীত দিয়ে। ভোর হলেই শুরু হয় রমনার বট মূল্যে দলে দলে লোক আসার জন্য। আপনার বাট মূলে এসে সবাই একসঙ্গে সুর মিলিয়ে গেয়ে থাকে এসো হে বৈশাখ এসো এসো। এটি হতে পারে আপনার পহেলা বৈশাখ উদযাপনের একটি চমৎকার মাধ্যম।

আপনি যদি চান রূপ সব মুখর পরিবেশে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে পহেলা বৈশাখ টি উদযাপন করতে পারেন। ছায়নাটের বর্ষবরণ উৎসবের পাশাপাশি মঙ্গল শোভাযাত্রা বর্ষবরণ উৎসব কে আরো জাঁকজমক পূর্ণ করে তোলে ‌ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা করে থাকে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চালু কলার মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় রংবেরঙের বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিলিপি মুখোশ বিভিন্ন ধরনের প্রতীকী উপকরণ বহন করা হয় নাচে গানে মুখরিত হয় পুরো এলাকা।

লেখকের মন্তব্য

পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির ঐতিহ্যের প্রতীক। এই দিনটিকে আপনি বিভিন্ন রকম ভাবে উদযাপন করতে পারেন। সব বয়সী মানুষ এই উৎসবটি পালন করে থাকে। ছোট থেকে একেবারে বৃদ্ধ মানুষ পর্যন্ত এই পহেলা বৈশাখটি উদযাপন করে। এই অনুষ্ঠানটি উদযাপন করার সময় আপনারা নিরাপদে থাকবেন এটি আমাদের কামনা। এই আর্টিকেলকে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে একটি লাইক দিবেন এবং বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url