বেগুনের চাষ পদ্ধতি ও বেগুনের রোগবালাই এর প্রতিকার
বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো । বেগুন আমাদের দেশে একটি জনপ্রিয় ফসল । বেগুন ছাড়া তরকারি রান্না কল্পনা করা যায় না । সাধারনত সব মৌসুমে বেগুন চাষ করা হয় । কাঁদা মাটি বাদে প্রায় সব মাটিতে এটা চাষ করা যায় । তবে বেশী উপযোগী মাটি পলি দো- আঁশ ও এঁটেল দো আঁশ । বেগুন চাষ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই যে সব জমিতে পানি নিস্কাসন করা যায় সে সব জমি নির্বাচন করতে হবে ।
আপনে যদি ভালো মানের বেগুনের চারা তৈরি কতে চান তাহলে আপনাকে ভালো জাতের বীজ কিনতে হবে । তারপর আপনাকে বীজ তলা তৈরি করে বেড করে বীজ লাগাতে হবে । এমন ভাবে বীজ তলা তৈরি করতে হবে যেন সেখানে পানি না জমে ।
ভূমিকা
বেগুন একটি আমাদের দেশে জনপ্রিয় ফসল । কি ভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে বেগুন চাষ করা হয় তা বিস্তারিত আলোচনা করবো । বেগুন শীত কালে বা গরম কালে উভয় মৌসুমে চাষ করা যায় । প্রথমে আপনাকে চারা তৈরি করে জমিতে রোপণ করতে হবে । রোপণ করার আগে জমি ভালো করে চাষ করে মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে চারা লাগাতে হয় । চারা লাগানোর ১৫ থেকে ২০ দিন পর নতুন পাতা গজায় । নতুন পাতা বের হলে যদি জমি শুকনা থাকে তা হলে সেচ দিয়ে সার দিতে হয় । গাছ বড় হলে পোকার আক্রমন হলে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে ।
বেগুন চাষের আধুনিক পদ্ধতি
আমাদের দেশে প্রায় সব জেলায় বেগুনের চাষ করা হয় । শীত কালে বা গীস্ম কালে উভয় মৌসুমে এটা চাষ করা যায় । আপনে যদি শীত কালে বেগুন চাষ করতে চান তাহলে শ্রাবন মাস থেকে আশ্বিন মাসে বীজ বপন করে নিতে হবে । বর্ষা কালে বেগুন চাষ করতে চাইলে চৈত্র মাসে বীজ বপন করে চারা করে নিতে হবে । বেগুনের বিভিন্ন রকমের জাত আছে এদের মধ্যে মাকড়া , নয়ন কাজল , ঈশ্বরদী ১ , তল্লা বেগুন , ইসলাম পুরী , ইত্যাদি জাত লাগাতে পারেন ।
হাইব্রিড জাত গুলো যেমন পার্পল কিং , বারি বেগুন ২ , বারি বেগুন ৫ , শুকতারা , ডিম বেগুন , বিতি বেগুন , কাজলা বারি ৪ ইত্যাদি জাত সমূহ লাগাতে পারেন । আবার আসি বীজ তলা থেকে বীজ তুলে কিভাবে জমিতে চা লাগাতে হয় । প্রথমে আপনাকে ভালো করে জমি ৩ থেকে ৪ বার আড়াআড়ি ভাবে চাষ দিয়ে মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে । এমন ভাবে চাষ বা মই দিতে হবে যেন জমির মাটি ঝুরঝুরে হয় । এরপর বীজ তলা থেকে চারা তুলতে হবে ।
যে দিন তুলবেন তার আগের দিন বীজ তলায় পানি দিলে ভালো ভাবে চারা গুলো তুলতে সুবিধা হয় । চারা তুলার পর আপনাকে লাগানোর প্রস্তুতি নিতে হবে । যে জমিতে লাগাবেন বা যে সারিতে লাগাবেন সেই সারি একটু বেড করে নিলে ভালো হয় । যাতে বৃষ্টির পানি বা ছেঁচের পানি বেডের উপর পরলে তা বেড থেকে নিচের লাইন এ পরে বের হয়ে যায় ।
বেগুন গাছে সার প্রয়োগ
সাধারনত গাছ লাগানোর ১৪ থেকে ১৭ দিন পরে নতুন পাতা বের হতে শুরু করে । নতুন পাতা যখন বের হবে তখন জমিতে সার দিতে হবে । আপনাকে কয়েক রকমের সার ব্যবহার করতে হবে । এগুলো হল ডি এ পি সার , ইউরিয়া সার , পটাশ সার এসব দিলে জমির শক্তি অনেক বৃদ্ধি পাবে । আবার আপনে সরিষার খৈল দিতে পারেন । সব গুলো এক সাতে মিশিয়ে গাছের গোঁড়ার চারদিকে ছিটিয়ে দিতে পারেন । সকাল বেলা অথবা বিকেল বেলা জমিতে সার দিলে ভালো হয় ।
সকাল বেলা সার দিলে আপনাকে গাছের পাতায় যেন পানি না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে । গাছের পাতায় পানি থাকলে সেই পানির উপর যদি সার পরে তাহলে সেই কচি পাতা সারের জন্য ক্ষতি কারন হতে পারে । যত দূর সম্ভব গাছের পাতার পানি শুকিয়ে গেলে তার পর সার প্রয়াগ করা ভালো । আপনে যখন জমি তৈরি করবেন তখন আপনে ফসফেট সার , দস্তা , বোরন , সালফার ইত্যাদি দিয়ে চাষ দিয়ে নেতে পারেন , এতেও ভালো ফলাফল পাবেন ।
বেগুন গাছের পাতা কোকড়ানো রোগ
কিড়া পোকা বেগুন গাছের পাতার সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করে । সাধারনত এই পোকা যে গাছের পাতায় আক্রমণ করে সেই পাতা আস্তে আস্তে কুক্রিয়ে যায় । আক্রমণ করা পাতায় এই পোকার লাভা অবস্থান করে । এই পোকা ধিরে ধিরে পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে এ জন্য পাতা কুক্রিয়ে যায় । বেশী ক্ষতি হয় পাতার উপরের দিকে । এতে পাতা শুকিয়ে যায় , পাতা বাদামি আকার ধারন করে এবং শুকিয়ে যায় । ধিরে ধিরে সমগ্র গাছে আক্রান্ত হয় ।
যদি এই পোকা দমন করা না যায় আস্তে আস্তে এরা বংশ বিস্তার করে সমগ্র জমিকে আক্রান্ত করে ফেলে । এতে ফসল উৎপাদন অনেকাংশে কমে যায় । এই পোকা গাছকে ও গাছের বৃদ্ধির ক্ষতির কারন হয়ে দাড়ায় ।
বেগুন গাছের ডগা ছিদ্রকারি পোকা
বেগুন গাছের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করে ডগা ছিদ্রকারি পোকা । এই পোকা আক্রমনের ফলে গাছের ডগা নেতিয়ে যায় । এতে গাছের কচি পাতা ঢলে পরে । এই পোকা বেগুনের ভিতরে ডুকে শাঁস খেয়ে বেগুন নষ্ট করে ফেলে । যদি বেশী আক্রান্ত হয় তা হলে বেগুন পস্তে শুরু করে এতে ফল ঝরে পরে । অনেক সময় গাছ মারা যায় । এটা এক ধরনের মাছির মত দেখতে এরা বেগুন ও গাছের ছিদ্র করে থাকে ।
বেগুনের রোগ বালাই প্রতিকার
বেগুন গাছের জমি সাপ্তাহে একবার হলেও পরিস্কার করতে হবে । আক্রান্ত গাছের ফল ছিরে ফেলতে হবে এবং ডগা ছিরে ধংস করতে হবে । সপ্তাহে একদিন করে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে । প্রথমে আপনাকে মানসম্পন্ন চারা লাগাতে হবে । সুস্ত ও সবল চারা রোপণ করতে হবে । প্রতিদিন জমি পরিদর্শন করে দেখে নিতে হবে যাতে জমিতে কোন কিছু না থাকে । বেগুন গাছের নিচের দিকের পাতা গুলো ছেঁটে ফেলে পুরিয়ে ফেলতে হবে ।
যাতে পোকার বংশ বিস্তার করতে না পারে । জমিতে কোন আক্রান্ত গাছ থাকলে তা তুলে ফেলে দিতে হবে । আক্রান্ত বেগুন গাছের ডগা ধারালো কিছু দিয়ে ছেঁটে ফেলুন । ছেঁটে ফেলা গাছ জমি থেকে একটু দূরে ফেলে দিন । এতে নতুন করে আক্রান্ত হবার সম্ভবনা অনেকাংশে কমে যাবে । গেগুন গাছের জমিতে বেড়া দিতে পারেন বা নেট দিয়ে ঘিরে দিলে পোকার আক্রমন ঠেকাতে পারেন ।
যদি নেট দিয়ে ঘিরে দেন তাহলে পাখি ও অন্যান্য পোকামাকড় ফসলকে বেশী নষ্ট করতে পারবে না । বেগুন গাছের পোকা দমন করার জন্য ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে । জমিতে ফেরোমন ফাঁদ ১০ থেকে ১৫ মিটার দূরতে পাতুন এই ফাঁদের নীচে থাকা পানিতে পোকা গুলো ধরা পরবে । প্রত্যেক দিন এই ফাঁদ গুলো দেখে নিন যদি কোন ফাদে পান শুকিয়ে যায় তাহলে আবার সে গুলতে পানি দিবেন ।
একবার ফেরোমন ফাঁদ পাতলে তা ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর আবার পরিবর্তন করে দিন । আবার আসি কীটনাশক এর দিকে , বেগুনের জমিতে জাব পোকার আক্রমন করে তাহলে ইমিটাফ বা একতারা কীটনাশক স্প্রে করতে পারেন । জমিতে যদি মাছি পোকার আক্রমন বেশী হয় তবে সবিক্রন কীটনাশক প্রতিলিটার পানিতে ২ মিলি হারে স্প্রে করতে হবে । এতে আপনে ভালো ফল পাবেন ।
লেখকের মন্তব্য
বেগুন চাষের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে ও বেগুনের চারা কি ভাবে তৈরি করতে হয় , বেগুন চাষ করতে হলে রোগ বালায় ও প্রতিকারের সম্পর্কে বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করেছি । আপনার এই লেখা যদি ভালো লেগে থাকে তা হলে একটা লাইক দিবেন এবং বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url