লিচু চাষের আধুনিক পদ্ধতি ও নিয়ম কানুন
আপনে কি আধুনিক পদ্ধতিতে লিচু চাষ করতে চান তাহা হলে যেনে নিন কি ভাবে লিচু চাষ করতে হয় । কোন জাতের চারা লাগালে ভাল হবে , কি কি সার প্রয়েগ করতে হবে তাহা আলোচনা করবো এবং কয় ফুট দূরে দূরে লিচু গাছ লাগাতে হবে তাহা বিস্তারিত আলোচনা করবো । লিচু গাছ লাগানোর সময়কি ধরনের মাটি ব্যবহার করা হয় তাহা জানাবো ।
লিচুর চারা লাগানোর নিয়ম মুকুল আসার আগে ও পরে গাছের পরিচর্যা , লিচু গাছের ফুল আসা , লিচুগাছের রোগ বালাই প্রতিরোধ , লিচুর ফলন বৃদ্ধির উপায় ,
ভূমিকা
আধুনিক পদ্ধতিতে করতে গেলে অনেক গুলো নিয়ম মেনে চলতে হয় । কিভাবে চারা লাগাবেন , জমির মাটি কিভাবে চাষ দিবেন , চারা কি কিভাবে লাগাবেন ,মুকুল আসার আগে কি করতে হবে , মুকুল আসার পরে কি করতে হবে রোগ বালাই সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবো । আর্টিকেলটি না টেনে দেখতে থাকুন ।
লিচুর চারা লাগানোর নিয়ম
উর্বর পলি মাটি লিচু চাষের জন্য আদর্শ জায়গা । লাল মাটি , এঁটেল মাটি , ক্ষারমাটি তে লিচু চাষ ভাল হয় না । বহুবর্ষজীবী ফসল লিচু । লিচুর চারা লাগানোর আগে জমি ভাল করে চাষ দিয়ে মাটি সমান করে নিতে হবে । গর্ত করে জমির মাটির সাতে মিশিয়ে ভাল করে চারা রোপণ করতে হবে । জমির যে মাটি থাকবে সেই মাটি দিয়ে চারার গর্ত ভরে দিতে হবে ।
আগস্ট / সেপ্তেবার মাস লিচুর চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় । ১ গ্রাম কারবেন্ডাজিম বিষ প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে চারা শোধন করে নিতে হবে । সাধারনত লিচু গাছ ৮ থেকে ১০ মিটার পর পর লাগাতে হয় । লিচুর চারা লাগানোর সময় গর্তের ভিতরে হাল্কা করে মাটি চাপ দিয়ে বসিয়ে দিতে হবে । লিচু চারা লাগানোর পরেই হাল্কা করে সেচ দিতে হবে ।
বছরে কমপক্ষে দুই থেকে তিন বার পানি দিতে হবে । পানি দেয়ার পর কিছু সার যেমন নাইট্রোজেন , পটাশ , ফসফেট প্রয়োগ করতে হবে ।
মুকুল আসার আগে ও পরে লিচু গাছের পরিচর্যা
লিচু মুকুল আসার ২ মাস আগে বাগান ভাল করে পরিচর্যা করতে হবে । লিচু গাছের গোঁড়ার দিকে বা মাটির নিচে গাছের যে শিকড় একটু দূর দিয়ে ছড়িয়ে থাকে , গাছের গোঁড়া থেকে একটু দুরত্তে মাটি একটু উঁচু করে দিয়ে পানি ছেচ দিতে হবে , যাতে পানি গড়িয়ে অন্য জায়গায় না যায় । গাছ প্রতি ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া , ২৫০ গ্রাম পটাশ সার সেচের পর গোঁড়ার চার ধারে ছিটিয়ে দিতে হবে ।
বাগানে যদি পানি আটকে যায় তাহলে সে পানি সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বাগানের মাটি হালকা করে আলগা করে দিতে হবে পোকামাকড় থাকলে বালাইনাশক কীটনাশক এগুলো স্প্রে করতে হবে। মুকুলাসার ১২ মাস আগে লিচু গাছে যদি নতুন পাতা গজায় তাহলে সে পাতা অপসারণ করে দিতে হবে এবং লিচু গাছ দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
মুকুল আসার আগে গাছে ভালো করে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে যাতে ফল ছিদ্রকারী পোকা পাতা ছিদ্রকারী পোকা মারা যায়। আবার গাছের মুকুল আসলে স্প্রে করতে হবে কীটনাশক দিয়ে স্প্রে করতে হবে কিন্তু মুকুল ফোটার পরে স্প্রে করা যাবেনা আবার যখন লিচুর গুটি আসবে তখন আবার স্প্রে করা যাবে।। মুকুল আসার পর গুটি আসবে
এই গুটিকে ভালোভাবে যত্ন নিতে হবে এবং ভালো কোম্পানির কীটনাশক ও ব্যবহার করতে হবে যাতে মুকুলগুলো ঝরে না যায় মুকুল ঝরে গেলে গাছের লিচু কম আসবে এটার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
লিচু গাছে কোন মাসে ফুল আসে
লিচু গাছে সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে মুকুল আসে। সে সময় কৃষকের মুখে অনেক হাসি ফোটে মুকুল দেখে। এ সময় মুকুলের ভালো পরিচর্যা করতে হয় এবং ভাল কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় যা মুকুলের জন্য ভালো। মুকুল আসার সময় দেখা যায় অনেক গাছের নতুন কচি পাতা বের হচ্ছে তা দেখলে কচি পাতাগুলো ছেঁটে ফেলতে হবে
যাতে সেসব কেটে ফেলার ঘুরার দিক থেকে মুকুল বের হতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে মুকুল ফুটতে শুরু করে এবং গুটিগুটি ফল বের হতে থাকে। মুকুল থেকে গুটি বের হতে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে। সেই গুটি থেকে পূর্ণাঙ্গ ফল আসতে আরো কমপক্ষে এক মাস সময় লাগে।
লিচু গাছের রোগ ও প্রতিকার
লিচু গাছে মুকুল আসার পর তা অর্ধেকের বেশি ঝরে পড়ে যায়। গাছে মুকুল আসার পর ভালো করে পরিচর্যা করতে হবে যাতে রোগ বালাই না লাগে। অনেক সময় আমরা মুকুলে হরমোন প্রয়োগ করি এতে ভুল ধরা বন্ধ হয় এবং মুকুল থেকে ভালো লিচুর ফলন আশা করি আমরা। লিচু গাছের মুকুলের সাধারণত পাউডার পাউডারিং মিল্ডিং রোগের আক্রমণ ঘটে।
অনেক সময় এতে মুকুল কালো বর্ণের ধারন করে। লিচু গাছের মুকুলের অ্যানথার রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ইন্ড ফিল এম ৪৫ পাউন্ডারি মিলডিং রোগের জন্য কমলাস ঔষধ দুই গ্রাম হারে দশ লিটার পানিতে মিশিয়ে বারবার স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ছোট ছোট সাদা পোকা লিচুর জন্য খুব ক্ষতি করে এই পোকাগুলো পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে
বাদামি রঙের ভেলভেট তৈরি করে আক্রান্ত লিচু গাছের পাতায় ডাক্লোপিট জাতীয় বিষ স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। অনেক সময় লিচু গাছের পাতার নিচে অনেক ছোট ছোট পোকা দেখা যায় এগুলো পাতার নিচে ডিম পাড়ে এবং তিন চার দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের করে এবং কচি পাতা চুষে খায় আক্রান্ত পাতা বাকা হয়ে যায় আক্রান্ত পাতায় নতুন কুশি গজায় না
অতিরক্ত আক্রমণের ফলে ফলন কমে যায়। এসব পোকা দমনের জন্য ইমিডা ক্লোরোপিট জাতীয় কীটনাশক স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। অ্যানথার জাতীয় রোগ লিচুর জন্য বিরাট ক্ষতি করে এটা একটা ছত্রাকে আক্রমণ এর জন্য ফল খাওয়ার উপযোগী হয় না এবং অনেক ক্ষেত্রে ফল শুকিয়ে যায়। এটা প্রতিকারের জন্য টপিকোনাজল ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
এটা দমন করার জন্য পপি কোনাজল ছত্রাকনাশাল জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন টিল্ট ৫ মিলে ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে এতে ভালো ফল পাওয়া যায়।
লিচুর ফলন বৃদ্ধির উপায়
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url