Post Page After Menubar Ad

খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও খেজুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখুন



প্রিয় পাঠক, আমার ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আবার নতুন একটি আর্টিকেল নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি, সেটা হল খেজুর। খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও খেজুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে আজকের এই আর্টিকেলে। এ সম্পর্কে হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন কিন্তু যারা জানেন না তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি ।
বিভিন্ন ফলের মধ্যে আমাদের জন্য একটি আশীর্বাদ হলো খেজুর ‌। শিশু ,যুবক ,বয়স্ক যেই হোক না কেন খেজুর খেলে এর উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। খেজুরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে যেমন সালফার, প্রোটিন, ম্যাঙ্গানিজ ,ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন ডি, ভিটামিন এ, আয়রন
ও এন্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি।

ভূমিকা

খেজুর কিন্তু মরু অঞ্চলের ফল। এই ফলটিতে আছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ, ফাইবার ও ভিটামিন। প্রত্যেকদিন সকালবেলা আপনি যদি ৩-৪টা খেজুর খান তাহলে আপনার শরীরের অনেক উপকার পাবেন। আজকের এই আর্টিকেলে খেজুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে, খেজুরের উপকারিতা ,প্রতিদিন কয়টি খেজুর খাবেন, পুরুষের খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ,খেজুর কেন খাবেন ,খেজুর খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে।

খেজুরের পুষ্টিগুণ

খেজুরে আছেন নানান ধরনের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা। চলুন জেনে না যাক প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে কি পুষ্টি উপাদান আছে।

* ক্যালোরি আছে ১৫০ কিলো ক্যালরি খাদ্য শক্তি

* শর্করা ৩৩.৮০ ভাগ

* আমিষ ১. ২১ গ্রাম

* চর্বি ০.৪১ গ্রাম

* ক্যালসিয়াম ২২ মিলিগ্রাম

*আঁশ ৭.৪ ভাগ

* জলীয় বাষ্প ৫১.২ ০ গ্রাম

এছাড়াও শর্করা, চিনি, আঁশ ,চর্বি, আমিষ, বিভিন্ন প্রকার বিটা ক্যারোটিন, বিভিন্ন খনিজ উপাদান পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, দস্তা ও লৌহ সমৃদ্ধ। একটা খেজুরে প্রায় 78 ভাগ থাকে চিনি ও ২২ ভাগ থাকে পানি।

খেজুরের উপকারিতা

আমাদের শরীরের জন্য খেজুর একটি পুষ্টিকর ফল। আমরা সাধারণত প্রাকৃতিক শক্তির উৎস বলে থাকি খেজুর কে। খেজুরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে যা আমাদের শরীরে চাহিদার প্রায় ১১ ভাগ পূরণ করে থাকে। খেজুর আয়রনের অন্যতম সেরা উৎস। প্রত্যেকদিন খাবারে এটা রাখলে আপনাদের রোগ প্রতিরক্ষতা বাড়বে। তাই অনেক পুষ্টিবৃন্দরা প্রতিদিনের খাবার তালিকায় খেজুর কে রাখার কথা বলে থাকেন। আমাদের শরীরে আয়রনের প্রয়োজন হয় এই আয়রন পাওয়া যায় খেজুরের মধ্যে। তবে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের প্রচলিত খেজুরের বদলে অন্যান্য যেমন শুকনা খেজুর আছে সেগুলো খেতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। আমাদের শরীরের আরেকটি পুষ্টি উপাদান খনিজ যেটা খেজুর খেলে পাওয়া যায়। এটা খেলে আপনাদের অনেক ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হয়।

এবার জেনে নেই খেজুর খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়

খেজুরে আছে বিভিন্ন ধরনের এন্টিঅক্সিডেন্ট যেমন আইসোমারটাইট ও ফেনেলিক যৌগ যা আপনাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এই সকল যৌগ আপনাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষগুলোকে ফ্রি রেডিকেলের ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে। এই ফলটিতে আছে ভিটামিন বি যা আপনাদের মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। আরো আছে ভিটামিন বি ১২ ও ফোলেট জাতীয় উপাদান যা আপনাদের মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও খেজুরে আছে ম্যাগনেসিয়াম পটাশিয়াম ও আয়রন খনিস পদার্থ ব্রেনের কোল গুলোকে সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে

খেজুর যকৃতের সংক্রমণের জন্য বেশ উপকারী। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সর্দি, জ্বর ,ঠান্ডা ও গলা ব্যথা জন্য বেশ উপকারী একটি ফল। এলকোহলজনিত বিভিন্ন বিষক্রিয়ার জন্য বেশ উপকারী একটি ফল খেজুর। খেজুর ভিজিয়ে রাখলে তার পানি খেলে বিষ ক্রিয়ায় খুব তাড়াতাড়ি কাজ করে থাকে। আবার আপনি যদি প্রত্যেকদিন  খাওয়ার অভ্যাস করেন তাহলে আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে থাকবে ‌

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে

খেজুরি আছে নানান ধরনের ভিটামিন যা আপনার শরীরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ যেমন ভিটামিন ১, ভিটামিন ২, ভিটামিন ৩ ও ভিটামিন ৫ । এসব উপাদান আপনার দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। সেই সাথে আপনার যদি রাতকানা রোগের সম্ভাবনা থাকে তাহলে এই রোগ প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আপনাদের চোখের সমস্যা যদি বাড়াতে না চান তাহলে নিয়মিত  খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলেন।

ত্বকের যত্নে খেজুর

বয়স বেশি হলে প্রথমেই তা ত্বকে বোঝা যায়। তাই ভালো করে ত্বকের যত্ন নিতে হলে আপনাকে নিয়মিত খেজুর খেতে হবে। আপনার যদি নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে ওনার ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে অনেকটা বাঁচিয়ে তুলবে। এছাড়াও নানান ধরনের ত্বকের সমস্যা থাকলে খেজুর খেলে তা অনেকটা দূর হয়ে যায়। এছাড়াও আপনার ত্বকে যদি আকাশে ভাগ থাকে ও হরমোন জনিত বিভিন্ন সমস্যা থাকে নিয়মিত খেজুর খাবেন এতে অনেক উপকার পাবেন।

হিমোগ্লোবিন বাড়াতে

প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে খেজুরে। আপনি নিয়মিত খেজুর খেলে এই আয়রন আপনার শরীরের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। আপনার শরীরে যদি হিমোগ্লোবিন কম থাকে বা শরীরে রক্তস্বল্পতা হয় তাহলে আপনি নিয়মিত খেজুর খেলে এই সমস্যা দূর হবে। নিয়মিত খেজুর খেলে উনার শরীরে আইনের মাত্রা সঠিক থাকবে। কারণ নিয়মিত যদি আপনি খেজুর খান তাহলে আপনার হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা স্বাভাবিক থাকবে এবং রক্তে নতুন নতুন কোষ তৈরি হবে।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুব উপকারী একটি ফল খেজুর। খেজুরে যে আয়রন থাকে তা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুব উপকারী। খেজুরে আছে খনিজ এবং ভিটামিন যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুব অপরিহার্য একটি খাবার। গর্ভবতী মহিলারা প্রত্যেকদিন নিয়ম করে দুই একটি খেজুর খেতে পারেন।

প্রতিদিন কয়টি খেজুর খাবেন

খেজুরের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা থাকলেও এটা কিন্তু সব সময় খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত খেলে যে কোন খাবারই বিপদের কারণ হতে পারে। কতদিন আপনি চার থেকে পাঁচটি খেজুর খেতে পারেন এতে আপনার শরীরের বেশ উপকার মিলবে। ৪ থেকে ৫টি খেজুর বা ১০০ গ্রাম খেজুর এই মিলবে প্রায় ২৫০ ক্যালোরি। খেজুর একটু মিষ্টি হওয়ার জন্য এই ফল যদি আপনি বেশি পরিমাণে খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার ওজন কমার বদলে তা খুব দ্রুত বাড়তে থাকবে। এজন্য আপনাকে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ টির বেশি খেজুর খাওয়া উচিত নয়।

পুরুষের খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

* খেজুরে আছে নানান ধরনের পুষ্টি ও ভিটামিন যা পুরুষের শরীরের জন্য কর্ম দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

* যদি আপনি নিয়মিত খেজুর খান তাহলে আপনার বন্ধ্যাত্বের মত সমস্যাও দূর হয়ে যাবে।

* অনেক পুরুষ মানুষের হার্টের সমস্যা থাকে তারা যদি নিয়মিত খেজুর খান তাহলে এই হার্টের সমস্যা অনেকটা ভালো থাকে।

* উচ্চ রক্তচাপ কমাতে খুব কার্যকরী উপাদান খেজুর।

* ছেলেদের বার্ধক্য দূর করতে সহায়তা করে খেজুর।

* নিয়মিত খেজুর খেলে পুরুষের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

* অনেক পুরুষের বীর্য পাতলা হয় তারা যদি নিয়মিত খেজুর খান তাহলে আপনার বীর্য ঘন হবে।

খেজুর কেন খাবেন

খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল ও ভিটামিন, যা আপনাদের শরীরের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে সক্ষম।

* খেজুর আছে ফাইবার যা আপনার শরীরের খারাপ কোলেস্টরেল থেকে মুক্তি দেয়।

* রমজান মাসে সারাদিন রোজা থাকার পর যখন পেটটা খালি থাকে তখন আপনাদের শরীরে গ্লুকোজের প্রয়োজন পড়ে, ইফতার করার সময় যদি খেজুর খান , তাহলে আপনার শরীরের গ্লুকোজের চাহিদা পূরণ করে থাকে।

* আপনার যদি কষ্ট কাঠিন্য থাকে তাহলে রাত্রিতে কয়েকটা খেজুর ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা খালি পেটে সেই পানি খেলে আপনার এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

* খেজুর যখন কিভাবে তখন আপনার মুখের লালা কে খাবারের সাথে মিশতে সাহায্য করে এর ফলে আপনার পেটের বদহজম দূর করতে সাহায্য করে।

* হৃদরোগের যোগী কমাতেও খেজুর বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

* এছাড়াও খেজুরে আছে ৬২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৭.৪ মিলিগ্রাম লৌহ যা আপনার দাঁত ,নখ, ত্বক আরও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।

* খেজুরে থাকে খনিজ পদার্থ যা আপনার শরীরের পুষ্টিতে বিশেষ অবদান রাখে। খেজুরে থাকা ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড়ের অন্যতম উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে। নিয়মিত খেজুর খেলে আপনার দেহের ক্যালসিয়ামের অভাব অনেকটা পূরণ হয়।

* খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে ভালো আজওয়া খেজুর। এই আজওয়া খেজুর বিষের মহা ওষুধ হিসাবে পরিচিত।

খেজুর খাওয়ার নিয়ম

যেকোনো সময় আপনি খেজুর খেতে পারেন। সকালবেলা আপনে খালি পেটে খেতে পারেন আবার দুপুরে খাওয়ার আগেও খেতে পারেন। আবার অনেক সময় দেখা যায় যে আপনার মিষ্টি খেতে ইচ্ছা করছে তখনও আপনি খেজুর খেতে পারেন। এছাড়াও আপনি যখন ঘুমাতে যাবেন তখনও খেজুর খেতে পারেন। তবে আপনাকে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে অতিরিক্ত খাওয়া কোন কিছুই ভালো না অতিরিক্ত খেলে উপকারের পরিবর্তে আপনের ক্ষতির কারণ হতে পারে এই খেজুর। তাই অতিরিক্ত খেজুর খাওয়া থেকে আপনারা বিরত থাকবেন। প্রতিদিন আপনি চার-পাঁচটা খেজুর খেতে পারেন। যারা শরীরের ওজন বাড়াতে চান, তারা চাইলে এর থেকে বেশি খেতে পারেন।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, আজ এই আর্টিকেলে যে সমস্ত আলোচনা করেছি তার নিশ্চয়ই আপনারা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন। খেজুর এমন একটি ফল যার গুনের কথা বলে শেষ করা যাবে না। যেভাবেই আপনি খেজুর খান না কেন ও উপকার আপনি পাবেনই। আমরা শুধু যে রমজান মাসে ইফতারের সময় খেজুর খাব এটা যেন না হয়। আপনাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় খেজুর রাখেন এবং এটা নিয়মিত খাবেন আল্লাহর রহমতে আপনার শরীরে অনেক রোগ দূর করতে সহায়তা করবে খেজুর। নিয়মিত খেজুর খাবেন আপনার শরীরের ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করবে। আপনারা সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিয়মিত খেজুর খাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।







এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url