ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
প্রিয় পাঠক, আমার ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এবং এর পুষ্টিগুণ ব্যপারে আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন কিন্তু যারা জানেনা তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি । আপনারা মনোযোগ সহকারে এই আর্টিকেলটি পড়লে এ সম্পর্কে একটা বিস্তারিত জানতে পারবেন ।
ডাবের পানি খাওয়ার গুনাগুন সম্পর্কে আপনারা হয়তো অনেকেই অবগত নয় । ডাবের পানিতে আছে আমাদের শরীরের উপকারী অনেক পুষ্টি উপাদান। ডাবের পানি খেলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোক্ষ ক্ষমতা বাড়ে এবং ডাবের পানিতে আরো আছে অনেক গুনাগুন।
ভূমিকা
যাক আমাদের দেশের একটি অতি জনপ্রিয় ফল। এটা পছন্দ করে না এমন লোক খুবই কমই আছে। গরমের সময় ডাব আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এটা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকমের সমস্যা সহজে দূর করা যায়। আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা এর বিভিন্ন পুষ্টিগণাগুণ, উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরবো। চলুন এবার মনোযোগ সহকারে এই আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন ।
ডাবের পুষ্টি উপাদান
ডাবের পানিতে পুষ্টীয় উপাদান প্রচুর। এছাড়াও কি কি উপাদান আছে চলুন জেনে নেওয়া যাক। ক্যালোরি ৪৭ কিলো ক্যালরি, চর্বি ০.৪ গ্রাম, সোডিয়াম ৬৫ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম 620 মিলিগ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১২ গ্রাম, ডায়েটারি ফাইবার ২.৫ গ্রাম, প্রোটিন ২.৩ গ্রাম, চিনি ১০ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৬% ও ক্যালসিয়াম ৭% ।
ডাবের উপকারিতা
ডাব আমাদের কাছে একটি পরিচিত ফল। আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয়বস্তু হলো ডাবের উপকারিতা এবং অপকারিতা। ডাব আপনি যেকোনো সময় খেতে পারেন এবং এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। আমাদের শরীরে যখন পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয় তখন অনেক ডাক্তার এই ডাব খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু আবার যদি আমাদের শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে ডাবের পানি খাওয়া উচিত নয়। চলুন এবার জেনে নেওয়া ডাব সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য।
ত্বকের জন্য ডাব
ডাবে আছে খনিজ ও ভিটামিন তাই আপনি যদি প্রতিদিন ডাক খান তাহলে আপনার ত্বক খুব সুন্দর থাকবে। বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে যে, ডাবে আছে অ্যামিনো এসি ড এবং শর্করা যা আমাদের ত্বকের পুষ্টি জোগাতে এবং পানির ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে । আবার যাবে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা আমাদের ত্বকের অনেক সময় ব্রণ হয় এ থেকে আমাদের রক্ষা করে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় ডাবের পানি আমাদের ত্বককে উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে, মুখের কালো দাগ দূর করতে সহায়তা করে এবং মুখের বলিরেখা কমাতে সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় ডাব
একজন নারীর গর্ভাবস্থায় অনেক পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয় তার নিজের জন্য এবং অনাগত সন্তানের জন্য। তবে ডাব সবকিছু উপাদান না থাকলেও কিছু কিছু বিষয়ে বেশ উপকারে আসে আমাদের।
* ডাব আমাদের শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়তা করে।
* গর্ভাবস্থায় অনেক নারীদের উচ্চ রক্তচাপ বাড়তে পারে তবে ডাবের পানি খেলে এতে থাকা পটাশিয়াম আপনাদের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
* ডাবে থাকে পটাশিয়াম ,ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যা একজন নারীর গর্ভের বাচ্চা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
* গর্ভাবস্থায় অনেক নারীর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে তবে ডাবের পানি খেলে এই সমস্যা থেকে অনেকটা মুক্তি পেতে পারেন।
* এটাতে থাকে শর্করার পরিমাণ খুবই কম তাই এটা খেলে শরীরের ওজন বাড়বে না।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে
আমাদের শরীরে যদি ফ্রি রেডিকেল বৃদ্ধি পায় তবে আমাদের মধ্যে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দেখা দিতে পারে। ডাবে থাকা প্রচুর পরিমাণ খনিজ উপাদান ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে, এই এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের শরীরের ফ্রি রেডিক্যাল এর পরিমাণকে কম রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও যাবে আছে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের সাথে লড়াই করে এবং আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন যদি নিয়ম করে ডাব খান তাহলে আপনাদের শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পদার্থ বের হয়ে যায় এবং আপনাদের শরীর অনেক সতেজ হয়।
হার্ট এর জন্য ডাব
যদি আপনারা নিয়মিত ডাব খান তাহলে আপনাদের রক্তে থাকা কোলেস্টরেল এর পরিমাণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও ডাবে থাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। আমাদের শরীরে রক্তের কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে আমাদের হার্ট ভালো থাকবে। তাই ডাবের পানি আমাদের হার্টের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ডাব খাওয়ার নিয়ম
* আপনে সকাল বেলা খালি পেটে ডাব খেতে পারেন কারণ এই সময় ডাব খেলে আপনার শরীরের শক্তি বা এনার্জি অনেকটা বৃদ্ধি পাবে হলে সারাদিন যে কাজকর্ম করবেন ডাব আপনার শরীরের যথেষ্ট পরিমাণ শক্তি সঞ্চয় করবে।
* সকালে নাস্তার ১-১/২ ঘন্টা পর আপনি এটা খেতে পারেন ।
* দুপুরে খাবারের ১-২ ঘন্টা পর আপনি ডাবের পানি খেতে পারেন।
* সকালে যখন ব্যায়াম করবেন তার এক ঘন্টা পূর্বে বা একঘন্টা পরে আপনি এটা খেতে পারেন।
* এটাতে কোন কিছু মিশানো যাবেনা যেমন লবণ, গুড়, চিনি ইত্যাদি।
ডাবের অপকারিতা
ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতাও আছে। চলুন এবার জেনে না যাক এর অপকারিতা গুলি কি কি।
* যদি আপনার ডাব খেলে শরীরের কোন জায়গায় এলার্জি ভাব দেখা দেয় তবে আপনার ভেবে নিতে হবে ডাব খেলে আপনার এলার্জির সমস্যা হতে পারে। সেজন্য আপনাকে এ সময় ডাব না খাওয়াই ভালো।
* আপনারা অনেকেই আছেন যারা রাত বাড়িতে কেটে কিছু পানি খেলেন এবং বাকি কিছু অংশ রেখে দিলেন তবে এই রেখে দেওয়া অংশ অনেক সময় নষ্ট হতে পারে সেজন্য ওই পানি খেলে আপনাদের অনেক সময় বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়া হতে পারে।
* ডাবে থাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, সোডিয়াম এবং বিভিন্ন ধরনের খনিজ পাতা যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই দরকারি কিন্তু বেশি পরিমাণে এটা খেলে আমাদের শরীরে পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও অন্যান্য খনিজ উপাদান বেড়ে যেতে পারে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
* যদি আপনি নিয়মিত ডাব খান তাহলে আপনার কিডনি রোগ হবেনা। কিন্তু যদি আপনার কিডনি রোগের সমস্যা থাকে তাহলে ডাব খাওয়া যাবেনা। যদি আপনার কিডনির সমস্যা থাকে তাহলে শরীর থেকে অতিরিক্ত পটাশিয়াম বের হয় না। এজন্য ডাবে থাকা পটাশিয়াম ও দেহের পটাশিয়াম একসাথে হৃদপিণ্ড ও কিডনি দুটোই অকার্যকর করে দিতে পারে। এমন অবস্থায় এ সমস্ত রোগী মৃত্যু হতে পারে। তাই যদি আপনাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে এবং এই পটাশিয়াম বের হয় না তাদের জন্য ডাব খাওয়া ঠিক নয়। এ সমস্ত রোগীদেরকে ডাব খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
* আপনারা যারা আপনাদের শরীরের ওজন কমাতে চান তাদেরকে বেশি পরিমাণে ডাব খাওয়া যাবেনা। ডাবের পানি শরীরের ক্যালরির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। বাজারের বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর পানীয় বা ফলের রসের তুলনায় ডাবের পানিতে চিনির পরিমাণ খুবই কম থাকে। হবে ডাবের পানি খেলে সহজেই উনার শরীরের ক্যালোরি বেড়ে যেতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
যাবে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এতে কিছু অপকারিতা থাকলেও কিন্তু এর উপকারিতাই বেশি। এতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং দেহের অনেকটা সুস্থ রাখে। আজকের এই আর্টিকেলে ডাবের পুষ্টিগুণ উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা করি এটি পড়ে আপনারা খুব উপকৃত হয়েছেন। এই আর্টিকেলটি আপনার বন্ধুদের মাঝে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url