ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম, আপনারা কেমন আছেন, আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে যদি আপনার জানা না থাকে তাহলে আজকের এই আর্টিকেল থেকে জেনে নিন। আপনারা অনেকেই ডিম খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু ডিমের যে উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে সে সম্পর্কে হয়তো আপনাদের তেমন কোন ধারণা নেই। সেজন্য আজকের এই আর্টিকেলে সঠিকভাবে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।
আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে প্রতিদিন অনেক পুষ্টির প্রয়োজন হয়। নানান রকম খাবারের মাধ্যমে শরীরের এই পুষ্টি চাহিদা আমরা পূরণ করে থাকি। এমন অবস্থায় ডিম আমাদের শরীরে অনেক রকমের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। আজকের এই আর্টিকেলে ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব, আশা করি ধৈর্য সহকারে এই আর্টিকেলটি পড়লে এ সম্পর্কে একটা বিস্তারিত ধারণা পেয়ে যাবেন।
ভূমিকা
ডিম আমাদের শরীরের জন্য একটি পুষ্টিকর খাবার। আমাদের শরীরের জন্য ডিম যে কতটা উপকারী তা কে না জানে। প্রেশার কমে গেলে আমরা ডিম খাই, শরীরের শক্তি জোগাতে আমরা ডিম খাই, ছোট থেকে শুরু করে বড়রা সবাই আমরা ডিম খেয়ে থাকি। আজকে আমি ডিমের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে এবং এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব আশা করি আপনারা মনোযোগ সহকারে এই আর্টিকেলটি পড়বেন।
ডিমের পুষ্টি উপাদান
আপনারা অনেকেই জানেন না ডিমে কি পরিমান পুষ্টি উপাদান আছে। চলুন জেনে নেওয়া এর পুষ্টি উপাদান।
প্রোটিন ৬ .৪২ গ্রাম, চর্বি ২৮.৯০ গ্রাম, কার্বোহাইড্র ৫৮.৭০ গ্রাম, ফাইবার ৩.৪ গ্রাম, শক্তি ৫২০ কিলো ক্যালরি, চিনি ৫৪.৬০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম, ১২৯ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১৮০ মিলিগ্রাম, কোলেস্টেরল আছে ৪১০ মিলিগ্রাম।
ডিম খাওয়ার উপকারিতা
ডিম খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের উপকার পাওয়া যায়। ডিম খেলে আপনার শরীরের বিভিন্ন রকমের সমস্যার সমাধান হবে এটা মোটেও ঠিক নয়। এটা শুধুমাত্র বিভিন্ন ধরনের রোগের ঝুঁকি কমাতে এবং রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে
আমাদের শরীরের ওজন কমাতে ডিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে ডিমে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন থাকে। প্রোটিন দীর্ঘ সময় শরীরের শক্তি ধরে রাখতে এবং পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। এজন্য বারবার আমাদের খাবার খাওয়ার ইচ্ছা জাগে না ফলে শরীরের ক্যালরির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। এই প্রক্রিয়াটি শরীরের ওজন বৃদ্ধির সমস্যা কমাতে অনেকটা সাহায্য করে (তথ্যসূত্র )। ডিম খাওয়ার পাশাপাশি আপনার শরীরের ওজন কমানোর জন্য ব্যায়াম কেউ প্রতিদিন রুটিন অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
চোখের জন্য
আপনারা যদি প্রতিদিন সেদ্ধ ডিম খান তাহলে আপনার চোখের জন্য বেশ ভালো। আপনাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে চোখের দৃষ্টিশক্তি অনেকটা কমে যেতে শুরু করে। তাই আপনার চোখকে সুস্থ ও সবল রাখতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডিম রাখুন। এছাড়াও ডিমে বিভিন্ন রকমের ভিটামিন চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শক্তি বৃদ্ধিতে
আপনারা প্রতিদিন সকালে ডিম খাবেন, এতে করে সারাদিন আপনাদের শরীরের শক্তি বজায় রাখতে অনেকটা সাহায্য করে থাকে। এটাতে আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন রকমের ভিটামিন ও মিনারেল থাকে যা শরীরের বিভিন্ন কোষে শক্তি যোগাতে সহায়তা করে। এটি আপনার শরীরের শক্তি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আপনার শরীরে শক্তি বজায় রাখতে চাইলে প্রতিদিন সকালে নাস্তায় বা খালি পেটে এটা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
ক্যান্সার প্রতিরোধে
ডিম আমাদের শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জানা গেছে ডিমের যে সাদা অংশ এবং কুসুমের মধ্যে ক্যান্সার বিরোধী অনেক বৈশিষ্ট্য আছে, যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়তা করে। ফলে আপনি যদি নিয়মিত ডিম খান তাহলে ক্যান্সারের ঝুঁকি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়। তবে আপনাকে মনে রাখতে হবে যে ডিম ক্যান্সারের যদি কমাতে সাহায্য করে কিন্তু এটা কোনভাবেই ক্যান্সারের নিরাময় হিসাবে কাজ করে না। তাই আপনাদের যদি কারো ক্যান্সারের সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
পেশী তৈরিতে
ডিম খাওয়ার আরও একটা সুবিধা হল এটা আমাদের পেশী গঠনের অনেকটা সাহায্য করে থাকে। সাধারণত ডিমের সাদা অংশে থাকে অ্যামিনো এসিড এবং প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। এই দুটি পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের বেশি গঠন করতে সহায়তা করে। ডিম খেলে আমাদের কৃষি অনেকটা শক্তিশালী হয়। এ কারণে যারা প্রতিদিন ব্যায়াম করেন অবশ্যই ব্যায়াম করার পরে কয়েকটি ডিম খাবেন।
প্রোটিনের ভালো উৎস
জিমে কিন্তু প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। তাই কতদিন যদি আপনি ডিম খান তাহলে আপনার শরীর প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাবে। আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের কোষ মেরামত এবং নতুন নতুন কোষ তৈরি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। ডিমের মধ্যে যে প্রোটিন থাকে শিশু ,কিশোর ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীরে প্রোটিনের যোগান দিতে আপনার খাদ্য তালিকায় ডিম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। তবে গর্ভবতী মহিলারা কি পরিমান খাওয়া উচিত তা অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে এটা খাবে।
নখ ও চুলের জন্য
লোক ও চুলের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটা খাদ্য হলো ডিম। ডিমের কুসুমে পানিতে দ্রবনীয় পেপটাইড চুল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যদি আপনি চুলে ডিম ব্যবহার করেন তাহলে নানান ধরনের সমস্যা থেকে সুফল পাওয়া যায়। আপনি যদি নিয়মিত ডিম খান তাহলে বায়োটিনের ঘাটতি অনেকটা পূরণ করে থাকে এবং নক ভাঙ্গার সমস্যার সমাধান হয়।
কিভাবে ডিম খাবেন
বিভিন্ন রকম ভাবে আপনারা ডিম খেতে পারেন। নিচে কিছু ডিমের খাওয়ার ধরন দেওয়া হলো।
* আপনারা সিদ্ধ করে ডিম খেতে পারেন
* ডিমের অমলেট করেও খেতে পারেন
* ডিম দিয়ে এগরোল তৈরি করে খেতে পারেন
* ডিম দিয়ে তরকারি তৈরি করে রুটি ও ভাতের সাথে খাওয়া যেতে পারে
* ডিম দিয়ে কেক তৈরি করে খেতে পারেন
* ডিমের বিরিয়ানি বানিয়েও খাওয়া যেতে পারে
* ডিম দিয়ে বার্গার তৈরি করে খেতে পারেন
প্রতিদিন কয়টা ডিম খাবেন
প্রত্যেকদিন কি পরিমান ডিম খাওয়া উচিত তা সাধারণত নির্ভর করে উনাদের বয়স এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর। ছোট ছোট বাচ্চাদের প্রতিদিন কমপক্ষে একটি থেকে দুইটি ডিম খেতে দেওয়া যেতে পারে। বড়দের ক্ষেত্রেও প্রতিদিন একটি থেকে দুটি ডিম খাওয়া খুব উপকারী। তবে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যাদের প্রেসারের সমস্যা আছে অবশ্যই তাদেরকে ডিমের কুসুম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রতিদিন আপনার শরীরের জন্য কয়টি ডিম খাওয়া উচিত তা অবশ্যই একজন ডায়েটিশিয়ান এর কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন।
ডিমের অপকারিতা
ডিম যে শুধু আমাদের উপকারী করে তা নয় এর কিছু অপকারিতাও আছে। চলুন এবার এর অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
* ডিমের সাধারণত কোলেস্টরে পরিমাণ বেশি থাকে। তাই এটা বেশি পরিমাণ খেলে আপনাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটা বেড়ে যাবে।
* যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তারা অবশ্যই একটু ভেবেচিন্তে ডিম খাবেন। তবে হাঁসের দিনে এলার্জির পরিমাণ বেশি হয়।
* যাদের শরীরে হৃদরোগের সমস্যা আছে এবং ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে তাদের অবশ্যই পরিমাণ মতো ডিম খাওয়া উচিত। বেশি পরিমাণে খেলে এ ধরনের রোগীদের বিভিন্ন রকমের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
আজকের এই আর্টিকেলে আপনারা জানতে পেরেছেন যে ডিম খেলে কি কি ধরনের উপকার পাওয়া যায়। ডিম খাওয়ার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছেন এবং অপকারিতা সম্পর্কেও জেনেছেন। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছে। আর্টিকেলটি আপনাদের বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবে যাতে আপনার বন্ধুরাও এ সম্পর্কে জানতে পারে। আর যদি কোন কিছু জানার থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট করে আমাদেরকে জানিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url