ডেঙ্গু জ্বরের কারণ, লক্ষণ, এবং প্রতিকার সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম, আপনারা কেমন আছেন, আশা করি সবাই ভাল আছেন। ডেঙ্গু জ্বরের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার সম্বন্ধে আজ বিস্তারিত আলোচনা করব । এ সম্পর্কে হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন কিন্তু যারা জানেন না তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি। আপনি যদি মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়েন তাহলে ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে বিস্তারিত একটা ধারণা পেয়ে যাবেন।
এখন চলছে গরমের মৌসুম সাথে তীব্র তাপদাহ। একদিকে যেমন গরমে অতিষ্ঠ মানুষ অন্যদিকে আবার মশার কামড়ে অতিষ্ঠ। সাথে থাকছে ঘন ঘন লোডশেডিং। আমরা যারা বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল যখন লোডশেডিং হয়, তখন তো এই গরমে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে যাই সাথে আবার মশার কামড় আছে ।
ভূমিকা
ডেঙ্গু জ্বর কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যদি অন্য কোন ব্যক্তি স্পর্শ করে বা একই বিছানায় থাকে কিংবা তার ব্যবহৃত জামাকাপড় পরিধান করলে এর রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই। ডেঙ্গু জ্বরের কারণ, ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ এবং কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে এর ডেঙ্গু জ্বরে এবং কিভাবে থেকে প্রতিকার পাওয়া যায় তার বিস্তারিত আলোচনা থাকবে আজকের এই আর্টিকেলে।
ডেঙ্গু জ্বরের কারণ
আমরা জানি এডিস মশা কামড় দিলে ডেঙ্গু জ্বর হয়। আসলেই কি তাই ? চিকিৎসকরা কিন্তু এটা বলছেন তারা বলছেন পরিবেশে উপস্থিত কোন ভাইরাস যদি এডিস মশার সংস্পর্শে এসে সংক্রামিত হয় তখন এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। স্ত্রী এডিস মশা ডেঙ্গু জ্বরের বাহক হিসাবে কাজ করে। স্ত্রী এডিস মশা কামড় দিলে মানুষের ডেঙ্গু জ্বর হয়।
আবার যে ব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরের আক্রান্ত হয়েছে ওই ব্যক্তিকে যদি অন্যান্য মশা কামড় দিয়ে ওই মশা যদি কোন সুস্থ ব্যক্তিকে যা কামড়ায় তাহলে সে ব্যক্তিরও ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনাদের একটু জেনে রাখা দরকার এডিস মশা কিন্তু রাত্রি কামরায় না। এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
প্রাথমিক অবস্থায় আমরা সাধারণত অনেকেই জ্বরে ভুগে থাকি কিন্তু ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ প্রাথমিক অবস্থায় কিন্তু একই রকম। যারা একবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে তবে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে আপনার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের কিছু লক্ষণ নিম্নে বর্ণনা করা হলো।
৫ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার কামড়ে সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আপনারা খুব গুরুত্ব ভাবে এই উপসর্গগুলি জেনে রাখার চেষ্টা করবেন। এই উপসর্গগুলি হলো-
* প্রথমে আপনার জ্বর হবে, এই জ্বর ১০২° থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
* আপনার মাথা ব্যাথা হবে
* ক্ষুধা অনেকটা কমে যাবে
* মুখের কোন স্বাদ পাওয়া যাবে না
* চোখের পিছনে ব্যথা করতে থাকবে
* বমি বমি ভাব হবে বা বমি হতে থাকবে
* কোষ্ঠ কানিঠ্য
* শরীরে শীতলতা অনুভব করা
* চামড়ায় লালচে দাগ হতে পারে যেমন ্ র্ ্যাশ
* পেশিতে এবং গিঁটে গিটে ব্যথা হতে থাকবে।
ডেঙ্গু জ্বরের ঝুঁকিতে থাকেন যারা
ডেঙ্গু জ্বরের ঝুঁকিতে সাধারণত থাকেন এক বছরের কম বয়সী বাচ্চারা এবং ৬৫ বছরের উর্ধ্বে যাদের বয়স তাদের ডেঙ্গু জ্বরের ঝুঁকি বেশি। এছাড়াও যেসব মায়েরা গর্ভবতী, এবং যাদের ওজন একটু বেশি পরিমাণে, যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত, যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, যাদের হার্টের সমস্যা আছে, যাদের কিডনির সমস্যা আছে এবং নিয়মিত ডায়ালাইসিস করানো হয়, এ সকল ব্যক্তিরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথেই হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার
* এবার আমরা জানবো কিভাবে ডেঙ্গু জ্বর থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়।
* শুধুমাত্র প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে হবে জ্বর কমানোর জন্য
* আপনার জ্বরের মাত্রা যদি ঘন ঘন আসে তাহলে আপনি ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পরপর প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করতে পারবেন
* একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি দিনে চারটি ওষুধ সেবন করতে পারবেন। যদি এর বেশি খান তাহলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
* ডেঙ্গু জ্বরের জন্য অ্যাসপিরিন অথবা ব্যথা নাশক যেকোন গ্রুপের ওষুধ ডাক্তাররা খেতে নিষেধ করেন।
* জ্বর কমানোর জন্য কুসুম কুসুম গরম পানিতে কাপুর ভিজিয়ে আপনি শরীর মুছতে পারেন।
* আপনার ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে আজ থেকে দশ দিন পর্যন্ত কোন ভারী কাজ করবেন না এবং কোন পরিশ্রম করা যাবে না। তবে স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন।
* ডেঙ্গু রোগীকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার সেবন করতে হবে। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে পানি স্যালাইন ডাবের পানি এবং দুধ জাতীয় তরল পানীয় পান করতে হবে।
* আপনার যখন ডেঙ্গু জ্বর থেকে সেরে উঠবেন তখন আপনি প্রচুর পরিমাণে তরল পানীয় পান করুন। এ সময় আপনার শরীরে পানি শূন্যতায় যাতে না ভোগেন সে জন্য প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করতে হবে।
* পানি খাওয়ার পাশাপাশি আপনাকে স্যালাইন ডাবের পানি ফলের রস ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে পান করতে হবে।
* ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। ইলিশ মশা যেন বংশবৃদ্ধি করতে না পারে এবং দিনের বেলা যেন মশা কামড় এড়িয়ে চলা যায় সেদিকে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।
* সচেতনতার মাধ্যমে আমরা ডেঙ্গু জ্বরের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
* এখন প্রশ্ন কোন মশা কামড়ালে ডেঙ্গু জ্বর হয়। সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরের বা হিসেবে বহন করে এডিস মশা। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়। এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার পানিতে বংশবিস্তার করে। যেমন এসি বা ফ্রিজের নিচে জমে থাকা পানিতে ফুলের টপ ইত্যাদি এডিস মশার উৎপত্তিস্থল। এডিস মশা কামড়ানোর সাধারণত তিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দেয়।
লেখকের মন্তব্য
সচেতনতাই পারে আমাদেরকে ডেঙ্গু জ্বরের হাত থেকে রক্ষা করতে। শুধুমাত্র এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয় এটার সবারই জানা খুব জরুরী। তবে এডিস মশা কিন্তু দিনের বেলায় কামড়ায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি পরে আপনারা খুব উপকৃত হয়েছেন। যদি আরো কিছু জানা থাকে তবে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে দিবেন সেসব বিষয়ে আমরা পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা করব। যদি এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই একটা লাইক দিবেন এবং অন্যান্যরাও যেন জানতে পারে সেজন্য আপনাদের বন্ধুদের মাঝে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url