Post Page After Menubar Ad

গরমে শিশু ও নবজাতকের যত্ন সম্পর্কে জেনে রাখুন



প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম, আপনারা কেমন আছেন সবাই। আশা করি ভালো আছেন। গরমে শিশু ও নবজাতকের যত্ন সম্পর্কে আজ বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনারা হয়তো অনেকেই এ সম্পর্কে জানেন কিন্তু যারা জানেন না তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি। আশা করি মনোযোগ সহকারে এই আর্টিকেলটি পড়লে এ সম্পর্কে একটা বিস্তারিত ধারণা পাবেন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপদাহ। এই তীব্র তাপদাহের কারণে আবহাওয়া অফিস গত সোমবার তিন দিনের বা ৭২ ঘণ্টার হিট এলার্ট জারি করেছে। আগামি মে মাসের ৩ তারিখ পর্যন্ত কোন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা নাই ।

ভূমিকা

এখন চলছে গরমের মৌসুম এবং সাথে তীব্র তাপদাহ। এটা বৈশাখ মাস অথচ ঝড় বৃষ্টির কোন বালাই নেই। এই তীব্র তাপদাহে শিশুদের রোগ বলায় একটু বেশি হয়। এসময় শিশুরা জ্বর, সর্দি, কাশি এমনকি নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত হয়। তবে শিশুদের প্রতি একটু যত্নশীল হলে এসব রোগ বালাই থেকে তাদেরকে রক্ষা করা যায়। এই তীব্র তাপদাহে বা গরমে শিশুর বিশুদ্ধ পানীয় খাবার ব্যবস্থা করতে হবে সুষম খাবার খাওয়াতে হবে শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এসব বিষয়ের প্রতি একটু যত্নশীল হলে এই গরমে শিশু দেরকে কিছুটা নিরাপদ রাখা যাবে।

গরমে শিশুর রোগ বালাই

এপ্রিল মাসের শিশুরা সাধারণত বিভিন্ন রোগে ভুগে থাকেন।যেমন ভাইরাস জ্বর, নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া সহ বিভিন্ন রোগের সময়সী সূরা আক্রান্ত হয়। সাধারণত এ সময় হাসপাতালগুলোতে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় লেগেই থাকে। এই তীব্র গরমে হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন ১০০০ থেকে ১১ ০০ রুগী আসে। আউটডোরের রোগীর চাপও বেশি থাকে। এই গরমে শিশুর ও নবজাতক বাচ্চারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াতে। 

আবার এই গরমে অনেক পরিমাণে চর্ম রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিগতাও আসছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে। শিশুরা এই গরমে সবচেয়ে বেশি রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত হয়। কারণ এই গরমে ভাইরাস জন্ম নেয় বেশি।

এই অতিরিক্ত গরমে অল্প সময়ে খাবার রাখলে তা পচন ধরে। যদি আপনি এই পচন ধরা খাবার খান তাহলে আপনার ডায়রিয়া হবে। এই গরমে ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, ভাইরাস, প্যারাসাইটজনিত রোগ বেশি হয়। এসব ভাইরার জনিত রোগ সাধারণত অতিরিক্ত গরমে বা অত্যাধিক তাপমাত্রায় এগুলো বৃদ্ধি পায়।

তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে এই গরমে শিশুর ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া বেশি হচ্ছে এবং জল বসন্ত, চিকেন পক্স, খোচপসরা, স্কাবিস, রুবেলা ইত্যাদি রোগের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। সংক্রামক বিভিন্ন রোগ বালাই ছাড়াও শিশু শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হয়ে যাওয়ার ফলে শিশুরা হিট স্টক পর্যন্ত হতে পারে। এবং অতিরিক্ত এই গরমে শিশুর খামাচি হতে পারে।

গরমে শিশু ও নবজাতকেরা যাতে এ ধরনের রোগে আক্রান্ত না হয় সেজন্য তাদের পিতা-মাতাকে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

সূর্যের আলোতে না যাওয়া

শিশুরা সাধারণত বাড়ির বাইরে যেতে বা খেলাধুলা করতে বেশি পছন্দ করে । আপনি যদি গরমে শিশু বা নবজাতককে বাহিরে বের হতে দেন তাহলে এই তীব্র তাপদাহের ফলে তাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। এজন্য শিশুদের এই গরমে বাড়ির বাহিরে যেতে না দিয়ে বাড়ির ভিতরে খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রচন্ড গরমে শিশুরা যাতে সরাসরি সূর্যের আলো শরীরের না লাগে সেদিকে পিতা-মাতার খেয়াল রাখা উচিত। প্রচন্ড গরমে শিশুরা যদি বাইরে বের হয় বা খেলাধুলা করে এতে তাদের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যদি কোন কারণে শিশুদের বাড়ির বাহিরে যেতে হয় তবে তাদেরকে সুরক্ষা দিয়ে বাহিরে নিয়ে যেতে হবে এমনকি ছাতা ব্যবহার করা যেতে পারে।

বিশুদ্ধ পানি ও খাবার

শিশুদের শরীরে যাতে পানি শূন্যতা না হয়, সেজন্য গরমের সময় তরল খাবার খাওয়ানো উচিত। যেসব শিশুর বয়স ৬ মাসের নিচে এবং মায়ের দুধ পান করে তাদেরকে পানি খাওয়ানোর দরকার নেই। তাদের মায়ের দুধে যথেষ্ট। এই প্রচন্ড গরমে সকল বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ানো হয় তাদেরকে একটু ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়াবেন যাতে পানি শূন্যতা না হয়।

আবার যে সকল শিশুরা বুকের দুধ পান করে এবং অন্যান্য তরল জাতীয় খাবারও গ্রহণ করে প্রতিদিন বাচ্চার চাহিদা অনুযায়ী পানি খাওয়াতে হবে। যদি সম্ভব হয় একজন স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে কথা বলে তার কি পরিমাণ পানি খাওয়াতে হবে তারপরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। তবে যে সকল শিশুদের বয়স ৬ মাসের বেশি তাদেরকে দৈনিক কমপক্ষে এক কাপ পরিমাণ পানি পান করানো উচিত। যে সকল শিশুর বয়স এক থেকে দুই বছর তাদের দৈনিক কমপক্ষে চার কাপ এবং যে সব শিশুরা স্কুলে যায় তাদেরকে দৈনিক কমপক্ষে ৮ কাপ পরিমাণ পানি পান করা উচিত।

বয়সন্ধিকালীন শিশুদের বেলায় দৈনিক কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ কাপ পানি পান করা উচিত। এছাড়াও যেসব শিশুরা প্রাপ্তবয়স্ক তাদেরকে এই গরমের সময় ফলের শরবত সালাত ইত্যাদি খাওয়ানো ভালো। যেমন তরমুজ একটি তরমুজে প্রায় ৬৫ থেকে ৭৫ শতাংশই পানি। এ সকলের বাইরে ও গরমে যদি শিশুর শরীর দুর্বল লাগে তবে তাকে মাঝে মাঝে খাবার স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে।

শিশুর সুষুম খাবার

বর্তমান এই তাকওয়া এর কারণে বাংলাদেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠ বন্ধ আছে। স্কুল খোলার সাথে সাথে শিশুরা স্কুলে যাবে এটাই স্বাভাবিক তবে এটা খেয়াল রাখতে হবে যেন গরমে শিশুরা বাইরের খাবার না খায় সেদিকে বাবা-মাকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

বাইরে যে সব খাবার যেমন ফুচকা, ফাস্টফুড, চটপটি ইত্যাদি খেলে অনেক সময় ডায়রিয়ার ঝুঁকি থাকে। এই প্রচন্ড তাপদাহে শিশুদের তরল জাতীয় খাবার খাওয়াই উচিত। অতিরিক্ত গরমে শিশুরা খেতে চায় না। এজন্য তাদেরকে প্রতিদিন একই খাবার খাওয়ালে শিশুর খাবারের প্রতি অনীহা আসতে পারে।

এজন্য বাবা মাকে ধৈর্য সহকারে নতুন উপায়ে তাদের শিশু সন্তানকে খাওয়াতে হবে। গরমে শিশুরা যাতে বাইরের কোন ঠান্ডা জিনিস খেতে না পারে যেমন আইসক্রিম খাওয়ানো যাবে না। গরমের আইসক্রিম খেলে গলা শুকিয়ে যাবে অনেক সময় শরীরের পানি শূন্যতা হতে পারে।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা

এই প্রচন্ড তাপদাহে শিশুকে অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে। এই অতিরিক্ত গরমের সময় শিশুদেরকে প্রতিদিন সাবান দিয়ে নিয়মিত গোসল করাতে হবে এবং গোসল করানোর পর পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে তার সমস্ত শরীর মুছে দিতে হবে। প্রচণ্ড এই তাপদাহে বা গরমে শিশু বারবার ঘেমে যাবে তা অবশ্যই পাতলা কাপড় দিয়ে বা গামছা দিয়ে মুছে দিতে হবে। ঘাম যদি শরীরে শুকিয়ে বসে যায় তাহলে তা থেকে সর্দি জ্বর হতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

পরিশেষে বলতে পারি শিশুদের প্রতি যদি তাদের পিতা-মাতা একটু যত্নশীল হয় তাহলে তাদেরকে নিরাপদ থাকতে পারে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আর যদি কোন বিষয়ে আপনাদের জানার থাকে তবে আমাদেরকে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। যদি আর্টিকেলটা আপনাদের পছন্দ হয়ে থাকে তবে একটা লাইক দিবেন এবং অন্যরাও যেন এ বিষয়ে জানতে পারে এজন্য আপনাদের বন্ধুদের মাঝে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url